‘নগদ’ ব্যবহারের ঝুঁকি জানতে চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 08:37:06

বাংলাদেশ ডাক বিভাগের নতুন ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এর  কার্যক্রম নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে আছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কাছে ‘নগদ’ ব্যবহারে মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকির বিষয়ে মতামত জানাতে চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট। সম্প্রতি এক চিঠিতে মতামত জানতে চাওয়া হয় বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের সব ধরনের পেমেন্ট সেবার লাইসেন্স এবং তদারকির দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। নগদও মূলত একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা। কিন্তু ‘নগদ’ পোস্টাল অ্যাক্টের আওতায় পরিচালিত হওয়ায় তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। আইনের এই ফাঁক ব্যবহার করে প্রচলিত মোবাইল ব্যাংকিং সেবার চেয়ে নগদে কয়েক গুণ লেনদেন সীমা (ট্রানজেকশন লিমিট) নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এর মাধ্যমে মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও চাঁদাবাজির মতো ঝুঁকি বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধায়ন ছাড়া মোবাইলের মাধ্যমে বড় অঙ্কের লেনদেন মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি বাড়াবে। পরবর্তীতে যা দেশের অর্থনীতি এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ব্যাংক ছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মোবাইলে অর্থ লেনদেনের বিষয়টিতে আমরা শঙ্কিত। মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের জন্য লিমিট বা সীমা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু ‘নগদ’র লেনদেন সীমা মানি লন্ডারিংকে উৎসাহিত করবে।’

সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ‘নগদ’ সারাদেশে এই সেবা দিতে এজেন্ট নিয়োগ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পাঠানো গেলেও তোলা যায় মাত্র ১০ হাজার টাকা। কিন্তু ‘নগদ’ এর মাধ্যমে দিনে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লেনদেন করা যাবে। তাছাড়া একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে এমএফএস সেবায় একটি কোম্পানি একটি একাউন্ট খুলতে পারে। কিন্তু ‘নগদ’র ক্ষেত্রে এ বিষয়টি অস্পষ্ট রাখা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগদের মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেনের কারণে অবৈধ লেনদেন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে। ফলে অন্যান্য অপরাধও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘একই ধরনের সেবায় একেক প্রতিষ্ঠানের জন্য ভিন্ন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে এবং সুষ্ঠু ব্যবসায়িক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে। উন্নত দেশগুলোতে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো এন্টি মানি লন্ডারিং বিধি মেনে চলে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত বাংলাদেশ পোস্ট অফিস প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয়। তাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘নগদ’-এর ব্যতিক্রম হওয়া উচিৎ নয়। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানেই চলা উচিৎ।‘

এ বিষয়ে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার মণ্ডল বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘নগদের মাধ্যমে দেশে চাঁদাবাজি বাড়বে বলে অনেকে প্রচার করছেন। কিন্তু আমি মনে করি সেটা তাদের মনগড়া কথা। নগদে এ ধরণের কোনো ঝুঁকি নেই। কারণ ডাক বিভাগের আইনের আওতায় ইতোমধ্যে এ সার্ভিস পরিচালিত হয়। জিপিও’তে নগদ ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের একটা বুথও খোলা হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর