আমানতকারীদের ব্যাংকমুখী করতে নানা উদ্যোগ

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 01:20:59

ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট মেটাতে আমানতকারীদের ব্যাংকমুখী করার জন্য বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে- ঋণের সুদ হার কমানো, মুদ্রা ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানো, খেলাপি ঋণ আদায়, জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া টাকা ফেরত আনা এবং শেয়ারবাজার বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুযোগ কমিয়ে দেওয়া।

জানা গেছে, মুনাফা কম হওয়ায় আমানতকারীরা এখন ব্যাংকে টাকা রাখতে চাচ্ছেন না। তারা এখন বাড়তি টাকা সরকারি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। কিছু টাকা যাচ্ছে শেয়ারবাজারেও। ফলে ব্যাংকে টাকা না যাওয়ায় তারল্য সংকট প্রকট হচ্ছে। আর এর প্রভাবে উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে কম সুদে নতুন ঋণও নিতে পারছেন না।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে টাকার প্রবাহ বাড়লে ঋণের সুদের হার কিছুটা হলেও কমবে। আর সুদের হার কমলে বিনিয়োগ বাড়ার জন্য একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে।’

জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রে গড়ে ১১-১২.৫ শতাংশ হারে মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। আর ব্যাংকে মুনাফার হার গড়ে ৪-৮ শতাংশ। এছাড়া নানা ধরনের চার্জ কেটে রাখায় মুনাফা আরো কমে যাচ্ছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশ সমন্বয় করার পর ব্যাংকে রাখা টাকা বাড়ার চেয়ে কমে যাচ্ছে। এ কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে। বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে এই খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৪ হাজার কোটি টাকা। যদিও গত মে পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ।

ফলে সঞ্চয়পত্রের প্রতি সঞ্চয়কারীদের আগ্রহ কমাতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ২৬ হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সঞ্চয়পত্র কম বিক্রি করতে সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন সঞ্চয় ব্যুরো ও ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফলে ব্যাংক বা সঞ্চয় ব্যুরো অফিসগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী সঞ্চয়পত্র পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তা জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ কিনতে পারছেন না।

বিধি অনুযায়ী কোনো গ্রাহক একক নামে ৬০ লাখ এবং যৌথ নামে এক কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। আগে এটি অনেক গ্রাহকই মেনে চলতেন না। সঞ্চয় ব্যুরো বা ব্যাংকগুলোও এ ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করতো না। এখন সঞ্চয়পত্র কেনার আগে অঙ্গীকার করিয়ে নেওয়া হচ্ছে যে, তিনি যৌথ বা একক নামে কোটার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করবেন না।

অন্যদিকে, বিনিয়োগ কমাতে শেয়ারবাজারকে চাঙ্গা করা হচ্ছে না। বাজারে ওঠানামার মাধ্যমে স্থিতিশীল রাখা হচ্ছে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে না পারে সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে দিয়েছে। আগের বিনিয়োগ করা অর্থ সমন্বয় করার সময়সীমাও বেধে দেয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও টাকা শেয়ারবাজারমুখী করতে পারছে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর