তফসিলি ব্যাংকে স্থায়ী আমানত রাখার শর্তে নির্বাচনের আগে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য ১০০ কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থমন্ত্রণালয়।এই অর্থ সারাদেশের মন্দির সংস্কার, মেরামত ও পূজা অর্চণার জন্য এনডোর্সমেন্ট ফান্ডের সিডমানি হিসেবে জমা থাকবে।
গত ২৮ অক্টোবর অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত এক প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পরে এক সারমর্ম স্বাক্ষর করে অর্থমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য এই ১০০ কোটি টাকা দিয়ে তারা একটি এনডোর্সমেন্ট ফান্ড করবে। ফলে এখন থেকে আর বার্ষিক অনুদান দেওয়া হবে না। কারণ প্রকল্পগুলো সরকারি হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগের জন্য সিডমানিহিসেবে এ পর্ষন্ত ২১কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর নিদের্শনার প্রেক্ষিতে আরো ৭৯ কোটিটাকা সিডমানি দেওয়া হয়েছে। ফলে সিডমানির ১০০ কোটি টাকার লভ্যাংশ দিয়ে ট্রাস্টের পরিকল্পিত স্বাভাবিক কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে। ওই সিডমানি হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি প্রধান ও ধর্ম বিয়য়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বেসরকারি তফসিলভুক্ত ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখার নির্দেশনা থাকবে।
সূত্র মতে, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের নামে গচ্ছিত ২১ কোটি টাকা থেকে প্রাপ্য মুনাফা এবং সরকারের রাজস্ব খাত থেকে নিয়মিত বরাদ্দ দিয়ে ট্রাস্টের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু অর্থ সংকটের কারণে দেশের বাইরে হিন্দুদের তীর্থভ্রমণ, দুস্থ ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়ন, অন্তঃধর্মীয় সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে ট্রাস্টের মূলধন বাড়লে সরকারের রাজস্বের ওপর চাপ কমবে। পাশাপাশি ট্রাস্টের পরিকল্পিত কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনা করা যাবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কল্যাণ ট্রাস্টকে এককালীন ১০০ কোটি টাকা না দিয়েপ্রতিবছর বাজেটে বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করে অর্থ বিভাগ। কিন্তু এ প্রস্তাবে রাজি হননি অর্থমন্ত্রী। তিনি ১০০ কোটি টাকা এককালীন দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন।
এদিকে, ওই বরাদ্দের বাইরে সারা দেশের মন্দির সংস্কার ও মেরামতের জন্য ৪৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।তবে আপাতত ১৭৬ কোটি টাকা ছাড় করার জন্য পরিকল্পনামন্ত্রীকে ডিও লেটার দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে হিন্দু কল্যাণট্রাস্টের পক্ষ থেকে এক চিঠিতে ১০০ কোটি টাকা স্থায়ী বরাদ্দ চাওয়া হয়।
দেশব্যাপী এক হাজার ৮৩৩টি মন্দির, আশ্রম, মঠ, আখড়া, শ্মশান সংস্কার-মেরামত-উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য ৯১৭কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রামসহ চারটি জেলার বিদ্যমান ১৪৯টির হিন্দু প্রতিষ্ঠান সংস্কার মেরামত ও উন্নয়নকর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ব্যয় ধরা হয় ৯৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
এছাড়া শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির এবং শ্রীশ্রী ঢাকেশ্বরী কালীমন্দিরের জন্য ৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, হবিগঞ্জ জেলারবিদ্যমান ৪৮টি হিন্দুধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। সংস্কার কর্মসূচির বাইরে ধর্মীয় ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইতদের দক্ষতা বাড়াতে ২৪৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা, মন্দিরভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষাকার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য ২১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং লাঙ্গলবন্দ মহাষ্টমী পুণ্যস্নান উৎসবের অবকাঠামো উন্নয়নে ১২১কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।