নগদ মূলধনের অভাব, শ্রম অসন্তোষ, ঋণ দায়সহ নানামুখী সংকটে পড়ে অবশেষে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ পোশাক কারখানা ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের কাঁচপুরের কারখানা কমপ্লেক্সটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশের তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম পথিকৃৎ উদ্যোক্তা আনিসুর রহমান সিনহা ১৯৮৪ সালে ওপেক্স গ্রুপের মাধ্যমে পোশাক কারখানাটি গড়ে তুলেছিলেন। বিশাল এ শিল্প গ্রুপের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই পশ্চিমা ক্রেতাদের নজর কেড়েছিলেন তিনি। একসময় ওপেক্স-সিনহা গ্রুপের সাব-কন্ট্রাক্ট কাজ করে অনেক শিল্পোদ্যোক্তা বড় হলেও পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠানটি নিজেই এখন ধুঁকছে।
গত ১৮ অক্টোবর ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের কাঁচপুর শাখার কারখানায় বন্ধের নোটিস দেয়া হয়। গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (প্রশাসন) কমান্ডার বানিজ আলী (অব.) স্বাক্ষরিত ওই নোটিসে ১৯ অক্টোবর থেকে স্থায়ীভাবে কারখানা বন্ধের ঘোষণার কথা উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, ওপেক্স গ্রুপের স্বত্বাধিকারী ২০১২ সাল থেকে কাঁচপুরের সব কারখানায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এর পরও ঋণ ও জমিজমা বিক্রির মাধ্যমে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য খরচ দিয়ে কারখানাটি চালু রাখা হচ্ছিল। কিন্তু করোনা অতিমারীতে অর্ডারের অভাব দেখা দেয়। আবার শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি নিম্নদক্ষতা ও সময়ে সময়ে কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার কারণে কারখানা খোলার সমস্ত পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় মালিকের আর্থিক অবস্থার চরম অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে কারখানাগুলো চালানো আর সম্ভব হচ্ছে না।
কারখানা চালিয়ে রাখার মতো আর্থিক সংগতি বা সামর্থ্য মালিকের নেই উল্লেখ করে নোটিসে বলা হয়, এ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে শিল্প ও শিল্পসংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ২৮(ক) ধারা অনুযায়ী ওপেক্স গ্রুপ, কাঁচপুর শাখার সব গার্মেন্ট ইউনিট ও ওয়াশিং প্লান্টসহ সংশ্লিষ্ট সব ইউনিট ১৯ অক্টোবর থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হলো।
নোটিসে আরো বলা হয়, আইনের ভিত্তিতে বেতনসহ বকেয়া বিভিন্ন পাওনাদি পরিশোধ করা হবে। সেক্ষেত্রে শ্রম মন্ত্রণালয়, শ্রম অধিদপ্তর, বিজিএমইএ ও শ্রমিক প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এবং পাওনা পরিশোধ করা হবে। আলোচনার পর যত শিগগির সম্ভব পাওনা পরিশোধের তারিখ ও করণীয় সম্পর্কে নেয়া সিদ্ধান্ত নোটিস বা পত্রের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ওপেক্স অ্যান্ড সিনহা টেক্সটাইল গ্রুপের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (প্রশাসন) কমান্ডার (অব.) বানিজ আলী গণমাধ্যমকে বলেছেন, জুন থেকে কারখানায় অসন্তোষজনিত সমস্যা মোকাবেলা করে আসছিলাম। এ পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় ক্রয়াদেশ থাকা সত্ত্বেও কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছি। এখন শ্রমিকদের যাবতীয় পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে।