বরগুনায় দুইটি শুঁটকিপল্লী রয়েছে। দেশের বৃহত্তম শুঁটকিপল্লী হিসেবে খ্যাত তালতলী ও পাথরঘাটা। এ শুঁটকিপল্লীতে জেলেদের উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মিষ্টি পানির দেশি মাছের শুঁটকিপল্লী বলে পরিচিত তালতলীর আশার চর। এ পল্লীতে এখন সারি সারি শুকানো হচ্ছে নানা জাতের মাছ। এই দুই উপজেলার শুটকিপল্লীতে প্রায় দুই হাজার নারী-পুরুষ কাজ করছে। এই পল্লী থেকেই খাবার উপযোগী হয়ে শুঁটকি রপ্তানি হচ্ছে দেশ-বিদেশে। তবে জেলেরা দাবি করেন সরকারিভাবে শুঁটকি রপ্তানি হলে ভালো লাভবান হবে দাবি করেন।
জানা যায়, জেলার লালদিয়া,আশারচর, সোনাকাটা, জয়ালভাঙ্গা চরে অগ্রহায়ণ থেকে চৈত্র- এই পাঁচ মাস সরব থাকে শুঁটকিপল্লীর ক্রেতা, বিক্রেতা ও শ্রমিকরা। প্রতিটি শুঁটকিপল্লী হতে প্রতি সপ্তাহে ১০০ থেকে ১৫০ মণ মাছ রপ্তানি হচ্ছে। নদী থেকে কাঁচা মাছ শুঁটকিপল্লীতে নিয়ে আসার পর নারী শ্রমিকেরা তা পরিষ্কার করে। এরপর মাছগুলো পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে বানায় (মাচা) শুকানো হয়। তিন-চার দিনের রোদে মাছগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়। প্রস্তুত থাকে ক্রেতা পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এখান থেকে শুঁটকি চলে যাচ্ছে চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা ও জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
বর্তমানে প্রতি কেজি ছুরি মাছের শুঁটকি ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা, রূপচান্দা ৯’শ থেকে এক হাজার, মাইট্যা ৫০০ থেকে এক হাজার, লইট্যা ৪’শ থেকে ৬’শ,চিংড়ি ৬’শ থেকে ৮’শ টাকা এবং অন্যান্য ছোট মাছের শুঁটকি ২০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া এখানকার শুঁটকিপল্লির মাছের গুঁড়ি সারা দেশে পোলট্রি ফার্ম ও ফিশ ফিডের জন্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
বুধবার (০৩ নভেম্বর) সকালে তালতলীর আশার চর শুঁটকিপল্লীতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলে ও মালিক পক্ষ মিলে প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ কাজ করছেন। সেখানে প্রায় ৩০টি ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। পল্লীতে কেউ মাছ মাচায় রাখছেন, কেউ মাচায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন, কেউবা শুকনো মাছ কুড়িয়ে জমা করছেন।
জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২৫ থেকে ৩০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয় এখানে। এর মধ্যে রূপচাঁদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্টা, পোপা অন্যতম। এছাড়াও চিংড়ি, ছুড়ি, ভোল, মেদসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রয়েছে চাহিদা।
নদী থেকে চিংড়ি, লইট্টাসহ বিভিন্ন জাতের মাছ একসঙ্গে কিনতে হয় এবং দাম হয় ৫ থেকে ৭শ টাকা। শুকানোর পর দুই-আড়াই কেজি শুঁটকি বিক্রি করে ২ থেকে ৪শ টাকা লাভ থাকে। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদন করা হয় শুঁটকি। কেনো ধরনের বিষ ও কিটনাশক ছাড়াই শুঁটকি সংরক্ষণ করা হয় এখানে। এই এলাকার শুঁটকির চাহিদা একটু বেশিই। লাভজনক হওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর শুঁটকিপল্লীগুলোতে ঘরের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে জেলেরা। এজন্য জেলেদের পরিবারে দেখা গেছে উৎসব আমেজ বিরাজ করছে।
আশার চর শুটকি পল্লীর হাসিনা বেগম বলেন, নদীতে প্রচুর মাছ ধরা পড়ায় এই বছর শুঁটকি উৎপাদনও ভালো হচ্ছে। তা ছাড়া এ বছর কাঁচা মাছের চাহিদা বেশি, দাম কম থাকায় শুঁটকিতে লাভ ভালো হবে বলে আশা করছি। তবে সরকারিভাবে দেশে বিদেশে এই শুঁটকি রপ্তানি হলে খুব লাভবান হওয়া যাবে।
আরেক জেলে জামাল আকন বলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে শুঁটকি তৈরি করছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে তালতলীর আশার চর শুঁটকির চাহিদা আছে। তিন চার মণ মাছ শুকালে এক মণের মতো শুঁটকি তৈরি হয়। এটা খুব কষ্টের কাজ। তবে লাভ ভালো হলে সব কষ্ট লাঘব হবে।
তালতলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম বলেন এ উপজেলা শুটকি মাছের জন্য বিখ্যাত। এই পেশাকে আরো আধুনিকায়ন করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মৎস্যজীবীদের বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়ও সরকারিভাবে শুঁটকি রপ্তানির করা যায় সে ব্যবস্থা করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিষ ও কীটনাশক ছাড়া শুঁটকি তৈরির জন্য জেলেদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।