ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক: জ্বালানি সচিব

বিদ্যুৎ-জ্বালানী, অর্থনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-22 09:23:43

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান বলেছেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক, আমলারা এতোবড় সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এই কাজটি আমরা (আমলারা) করিনি।

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) এফইআরবি আয়োজিত ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। এফইআরবির চেয়ারম্যান অরুন কর্মকারের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন ইডি শামীম জাহাঙ্গীর।

জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আরও বলেন, দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনো অন্যথা ছিল না। আমরা ৬ মাস পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম। যখন আর বিকল্প অর্থায়নের সুযোগ নেই দেখেছি, তখন দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। আন্তর্জাতি বাজারে দাম আরও বাড়লে কি ডিজেলের দাম বাড়বে, সেই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে এই মুহূর্তে নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে সঙ্গে সঙ্গে কমিয়ে আনা হবে। তবে পরিবহন কিংবা অন্য ক্ষেত্রের দাম কমবে কিনা সে দায়িত্ব আমরা নিতে পারবো না। দাম বৃদ্ধির সঙ্গে ম্যাক্রাইকোনমিক ইমপ্যাক্ট অবশ্যই আছে, আমি এর সঙ্গে দ্বিমত করি না।

তিনি বলেন, মে মাসে দাম ৭১ ডলার হলো তখন থেকে পর‌্যবেক্ষণে রাখা হয়। অক্টোবরে এসে ৯৩ ডলারে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ২০১৮ সালে আইন করে, উদ্বৃত্ত অর্থ ১০ হাজার কোটি টাকা ফেরত নিয়েছে। এই টাকা ফেরত না নিলে আরও বেশি সময় অপেক্ষা করা যেতো। আমরা এটা মেনে নিয়েছি, কিছুটা সামলোচনা হবে। কিছুদিন গেলে মানুষ মেনে নিবে।

তিনি বলেন, অনেকেই প্রশ্ন করেন পেট্রোল অকটেনের দাম বাড়িযে লোকসান সমন্বয় করা যেতো। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি মোট জ্বালানি তেলের ৭৩ শতাংশ ডিজেল আর পেট্রোল-অকটেন ব্যবহার হয়ে ১০.৮২ টাকা। পেট্রোল অকটেনে ৪০ টাকা করে বাড়ালেও এই মুল্য সমন্বয় করা যেতো না। আর কেরোসিনের দাম না বাড়ালে ভেজাল মেশানোর একটি সম্ভাবনা থেকে যেতো। গ্যাসের দাম, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষযে ভাবছি না। বাড়াতে হলে বিইআরসিতে যেতে হবে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ বলেন, এককভাবে জ্বালানির দাম বাড়ানোর এখতিয়ার নেই বিপিসির।বিপিসি আমদানি করে, বিক্রি করে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি সরকারের সিদ্ধান্ত। বিপিসি শুধু এটা বাস্তবায়ন করেছে। গত কয়েক বছরে যে মুনাফা করেছে বিপিসি সেই টাকা দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এতে ৩০-৩৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হযেছে। শুধু এসপিএম বাস্তবায়ন হলে মাসে ৮’শ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরাও জ্বালানি তেলের একজন গ্রাহক। তেল বেড়েছে, গ্যাসের দাম ৪-৫ গুণ বেড়েছে, কয়লার দামও বেড়েছে ৫ গুন। সবকিছু একসঙ্গে জাতির কাঁধে ভর করেছে। জুলাই ২০২০ সালে থেকে জুন ২০২১ পযর্ন্ত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হয়েছিল ৫০ হাজার কোটি টাকা। ক্যাপাসিটি ২৫ হাজার কোটি টাকা, জ্বালানি ২৫ হাজার কোটি টাকা। ১১ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়েছে। এ সময় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ হয়েছে। আর বিক্রয় করা হয়েছে ৫.১২ টাকা করে। ইউনিট প্রতি ভর্তুকি দিতে হয়েছে ১.৪৯ টাকা। অর্ধেক দামে জ্বালানি পেলে ভর্তুকি দিতে হতো না। আসলে সারাবিশ্ব দুর্যোগপূর্ণ সময় পার করছে। বাড়তি বোঝা সবাই মিলে গ্রহণ করলে মোকাবিলা করা সহজ হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন বলেন, ডিজেল নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে তাই পেট্রোল অকটেনের তুলনায় কম রাখার দর্শন কাজ করতো। আমরা কি সেই দর্শন থেকে বের হয়ে আসতেছি!

ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, মালিক সমিতি আর রেগুলেটর ভাইস-ভারসা হয়ে গেছেন। এখন মালিকরা রেগুলেটরের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। প্লেয়ার রেগুলেটর হওয়ায় অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তেলের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি আইনসিদ্ধ হয় নি। আইনে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর এখতিয়ার বিইআরসি দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে তেলের দাম বৃদ্ধির আদেশ প্রত্যাহার করে বিইআরসিতে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। তারা যাচাই-বাছাই করে দেখুক আদৌ তেলের দাম বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আছে কি না। বিপিসির কার্যক্রম নিরীক্ষা করা উচিত, তাদের আয় ব্যায়ে স্বচ্ছতা নেই।

বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি একেএম হাতেম বলেন, সময়টা সঠিক হয় নি। এই সিদ্ধান্তের কারণে সারাদেশে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত। বিশ্ববাজারে অসম প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়ীদের।

সিপিডির পরিচালক (গবেষণা) খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মূল্যবৃদ্ধি ছাড়াও আরও অনেক বিকল্প হতে পারতো। সরকারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি ভুল হয়েছে। অক্টোবরের হিসেব ধরলে ৪ হাজার ৬৮০ কোটি টাকার মতো লোকসান হতে পারতো। বিপরীত দিকে বছরে বিপিসি ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে চায় ৭৮৩৮ কোটি টাকা। পূর্বের মূল্য হিসেবে, দাম বেড়ে যাওয়ায় এ পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। এখানে কিছুটা ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোই যেতো।

বিজেএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, কোভিডের কারণে যে নাজুক অবস্থায় পড়েছিল, সেই সংকট মাত্র কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছি। এখনই ডিজেল-কেরোসিন দাম বাড়ানো উচিত হয়নি।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, খবর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অক্টোবর ২০২১ মাসে মোট ৭২৬.৭১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বিপিসির। আর ভাড়া বাড়ানোর কারণে দৈনিক ২শ কোটি বাড়তি ভাড়া গুণতে হবে। বছরে ৬ হাজার কোটি টাকা মুনাফার জন্য ৭৩ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর