কৃষি প্রধান বাংলাদেশের মানুষের খাবারের চাহিদা পূরণে যেভাবে জোড় দেয়া হচ্ছে তেমন এসব খাদ্য মুখরোচক করার জন্য মসলার উৎপাদন বৃদ্ধিতের জোড় দিচ্ছে সরকার। দেশের ৫৮.৫০ লক্ষ টন মসলার চাহিদার বিপরীতে ৬.৩০ লাখ হেক্টর জমি থেকে ৫১.৯৬ লাখ টন মসলা উৎপাদন হলেও ৬.৬৬ টন ঘাটতি থাকে। আর এ ঘাটতি মেটাতে আমদানি করতে হয় প্রায় আট হাজার কোটি টাকার মসলা।
সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, দেশের প্রতিবছর পেঁয়াজের চাহিদার ৩৫.৫ লাখ টন এর বিপরীতে উৎপাদন হয়৩০-৩২ লাখ টন, ৩-৪ লাখ টন ঘাটতি থাকে। ৮.৬৩ লাখ টন মরিচের চাহিদা বিপরীতে উৎপাদন হয় ৬.৭৬ লাখ টন হলেও ঘাটতি প্রায় ১ লাখ ৮৭ লাখ টন, রসুনের ৭.৭২ লাখ টনের বিপরীতে উৎপাদন হয় ৬.৫৩ লাখ টন। ঘাটতি থাকে ১. ১৯ লাখ টন। ৪.৮১ লাখ টন আদার চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয় ২.৮৮ লাখ টন, ঘাটতি থাকে প্রায় ২ লাখ টন, হলুদের চাহিদা ২.৫১ লাখ টনের বিপরীতে উৎপাদন হয় ১.৮৩ লাখ টন । ঘাটতি থাকে ৬৮ হাজার টন। ধনিয়ার উৎপাদন ৫৬ হাজার টনের বিপরীতে চাহিদা প্রায় ৭০ হাজার টন। এক্ষত্রে ঘাটতি থাকে ১৪-১৫ হাজার টন। কালজিরার ২০ হাজার টনের রিপরীতে উৎপাদন হয় ১৪ হজার টন, ঘাটতি থাকে প্রায় ৬ হাজার টন।
মসলার আমদনি কমাতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) বাস্তবায়ন করছে ‘বাংলাদেশে মসলা জাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় এখন অক্টোবর ২০১৭- জুন ২০২১ পর্যন্ত ৪৭ টি উচ্চ ফলনশীল জাত এবং ১৫৬ টি আধুনিক চাষ প্রযুক্তি উদ্ধাবন করা হয়েছে। মাঠ পর্যায় এগুলো বিস্তারের মাধ্যমে মসলার ঘাটতি কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিএআরআই-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার।
তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, সীমিত কৃষি জমি ও জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলা করে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ। খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি আমাদের মসলাজাতীয় সফল ও উৎপাদন করা প্রয়োজন। খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে এটিও আমাদের বাধা হিসেবে কাজ করছে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, দেশের ৬৪ টি জেলার ১৯৪ টি উপজেলায় প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করা হচ্ছে। মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মানসম্মত মসলার বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধি করে জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করা সম্ভব।
প্রকল্প শুরু থেকে পর্যন্ত ৯টি মসলা ফসলের মোট ১১টি নতুন জাত এবং ৪৫টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে মসলা ফসলের চাষাবাদ, ফলন ও মসলার গুনগতমান বাড়ছে এবং ক্ষতির পরিমান কমানো যাবে। নতুন উদ্ভাবিত ও প্রচলিত জাতের সম্প্রসারনের জন্য এপর্যন্ত প্রায় ১১২.৫৮ টন বীজ/কন্দ ও ১২৮.০৬ লক্ষ চারা-কলম উৎপাদন ও বিতরন করা হয়েছে। হাতে কলমে চাষীদের প্রশিক্ষণের জন্য ৩৭০টি প্রদর্শনী, ১৯৬টি মাঠ দিবস আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর কৃষকের মাঠে বারি পেঁয়াজ-৫ এর ১০০টির অধিক প্রদর্শণীর প্রদানের ফলে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের চাষ সম্প্রসারন ও জনপ্রিয় হবে। এ ছাড়াও শীতকালে আরও দুইশতটি প্রদর্শণীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে অতিরিক্ত ১৫ লক্ষ বারি পেঁয়াজ-৪ এর চারা উৎপাদন করা হয়েছে যা বগুড়া অঞ্চলের ১০০ জন কৃষককে ১৫০০০টি করে ডিসেম্বর, ২০২১ মাসের শেষ সপ্তাহে বিতরণ করা হবে।
১১টি জাত মধ্যে (বারি চিভ-১, বারি একাঙ্গী-১, বারি পেঁয়াজ-৬, বারি মেথি-৩, বারি মরিচ-৪, বারি পুদিনা-১ ও ২, বারি অর্নামেন্টাল মরিচ-১ ও২), বারি পান-৩, বারি রাঁধুনী-১ ও বারি জিরা-১ (প্রস্তাবিত)।
দুটি প্রক্রিয়াধীন (১টি চুইঝাল ও ১টি রসুন) এবং আঞ্চলিক ফলন পরীক্ষনের পর রবি মৌসুমে বাকী দুটি জাত নিবন্ধণ করা হবে।এছাড়াও রয়েছে, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, ধনিয়া, কালোজিরা, আলু বোখারাসহ বিভিন্ন মসলার জাত উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, মসলা জাতীয় ফসলের কৌলিসম্পদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, উচ্চফলনশীল ও উন্নত মানসম্পন্ন মসলা ফসলের ওপি ও হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন, সমস্যা সংকুল এলাকা ও প্রতিকুল পরিবেশে খাপ খাওয়ানো উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন, বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত মসলা ফসলের উন্নয়ন ও বহুমুখীকরণ, গুণগত মানসম্পন্ন মসলা জাতীয় পণ্যের উৎপাদন, বানিজ্যিকীকরণ প্রযুক্তি, ব্যাপকহারে বীজ উৎপাদন ব্যবস্থা ও কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বা সুলভ মূল্যে বিতরণ, গবেষণা লব্ধ ফলাফল বিস্তারের সুবিধা- কৃষি সম্প্রসারণ ডিএই-এনজিওসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা জোরদারকরণ।
মসলা গবেষণা কেন্দ্রের এই কর্মকর্তা চাহিদা পূরণে বিএআরআই উদ্ভাবিত বিভিন্ন মসলার উন্নত জাত এবং টেকসই প্রযুক্তি বিস্তারের বিকল্প নেই।