এলপি গ্যাসের দাম বেশি চাইলে অভিযোগ করার পরামর্শ

বিদ্যুৎ-জ্বালানী, অর্থনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 23:56:59

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ঘোষিত এলপি গ্যাসের দর অনেক ব্যবসায়ী মানছে না। একই জেলায় কোথাও কমে, কোথাও আবার বেশি দামে বিক্রি করার খবর পাওয়া গেছে।

বরগুনা জেলা সদরের মোল্লা এন্টারপ্রাইজ প্রতি সিলিন্ডার (১২ কেজি) এলপি গ্যাস বিক্রি করছে ১২৫০ টাকা দরে (বিইআরসি নির্ধারিত দর ১২২৮ টাকা)। মোল্লা এন্টারপ্রাইজ পাইকারি দরে বিক্রি করছে ১২৩০ টাকা করে। অথচ একই জেলার তালতলী উপজেলা অপরুপা টেলিকমে নির্ধারিত দরের চেয়ে কম দামে ১২’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোল্লা এন্টারপ্রাইজে বাড়তি দরে গ্যাস বিক্রির অভিযোগ অনেক পুরনো।

মোল্লা এন্টারপ্রাইজের মালিক রিপন মোল্লা বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, এর কমে বিক্রি করলে তাদের পোষায় না। তাই খুচরা পর্যায়ে ১২৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

বেশি দাম নিলে গ্রাহকদের অভিযোগ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বিইআরসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ অনেক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।

বেশি দামে বিক্রিতে কোনো কোম্পানি জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনে আমদানিকারকের লাইসেন্স বাতিলের সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল।

তিনি বলেছেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকেও অভিযোগ দেওয়া যাবে। বিইআরসি নির্ধারিত দর বাস্তবায়নের জন্য তাদেরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিইআরসি সুত্র জানিয়েছে, তাদের কানেও কিছু অভিযোগ এসেছে যে কারণে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে প্রশাসনিক চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে জেলা প্রশাসনকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি দেওয়া হয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কেও। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে কার‌্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

ঝালকাঠি শহরে বিইআরসি নির্ধারিত দরের চেয়ে কম দামে বিক্রি করার খবর পাওয়া গেছে। জেলা সদরের একাধিক দোকানে খোঁজ নিয়ে ১২০০ থেকে ১২২৫ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বিভাগীয় শহর খুলনার লবনচরা এলাকাতেও কম দামে মিলছে এলপি গ্যাস। এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব নামের এক ভোক্তা জানিয়েছেন, সোমবার (২০ ডিসেম্বর) ওমেরা এলপি গ্যাস কিনেছেন ১২০০ টাকা দরে। এই শহরটিতে তুলনামূলক কম দামে এলপি গ্যাস বিক্রি হয়ে আসছে। নদী বন্দর থেকে কাছে হওয়ার পরিবহন খরচ কম থাকায় শহরটি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বেশ কিছু কোম্পানি মংলা দিয়ে এলপি গ্যাস আমদানি করে থাকে।

নভেম্বর মাসে সিলিন্ডার প্রতি (১২ কেজি) ১ হাজার ৩১৩ টাকা থাকলে আন্তর্জাতিক বাজারদর কমে যাওয়ায় ২ ডিসেম্বর কমিয়ে ১ হাজার ২২৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। নভেম্বর মাসে সৌদি সিপি (চুক্তি মূল্য) ছিল প্রোপেন ৮৭০ ডলার ও বিউটেন ৮৩০ ডলার। যা ডিসেম্বর মাসে কমে হয়েছে ৭৯৫ ও ৭৫০ ডলার। করোনার নতুন ধরণ ছড়িয়ে পড়ায় ধারণা করা হচ্ছে আগামী মাসে আরও কমে যেতে পারে এলপি গ্যাসের দর। বিশ্বব্যাপীই জ্বালানি তেলের মূল্য পড়তির দিকে।

গত ১২ এপ্রিল প্রথমবারের মতো এলপি গ্যাসের দর ঘোষণা করে বিইআরসি। তখন বলা হয়েছিল আমদানি নির্ভর এই পণ্যটির সৌদি রাষ্ট্রীয় কোম্পানি আরামকো ঘোষিত দরকে প্রতি মাসের ভিত্তি মূল্য গণ্য হবে। সিপি উঠা-নামা করলে এলপিজির মূল্য উঠা-নামা করবে। আমদানিকারকের অন্যান্য কমিশন ও খরচ অপরিবর্তিত থাকবে। বিইআরসি ঘোষিত কমিশনের বিষয়ে আমদানিকারকদের আপত্তির মুখে অক্টোবরে কমিশন বাড়িয়ে করা হয় ৪৪১ টাকা করা হয়েছে। ডিলার এবং খুচরা বিক্রেতার কমিশন বাড়িয়ে যথাক্রমে ৩৪ ও ৩৮ টাকা করা হয়। আর এই ৩৮ টাকা নিজের পকেটে রেখে অনেক জায়গায় বিক্রি করছেন ডিলাররা।

এপ্রিল মাস থেকে এলপি গ্যাসের দর ঘোষিত হয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার খবর পাওয়া যায় নি। এলপি গ্যাসের দর ঘোষণার সাংবাদিক সম্মেলনে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেছিলেন, কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে সেগুলো এখনই বলতে চাচ্ছি না।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে একাধিক দফায় ফোন দিলেও রিসিভ করেন নি।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, অভিযোগ পেলে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এলপি গ্যাস সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমার জানামতে এখনও পাই নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর