বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শীর্ষে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ভোল্টেজ বিড়ম্বনা বেশি ভুগিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। বিদায়ী বছরে গড়ে ১২৬৩ মিনিট বিদ্যুৎ বিহীন ছিল আরইবির গ্রাহকরা।
লো ভোল্টেজ বিড়ম্বনার শীর্ষে থাকার পাশাপাশি বিভ্রাটে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিপিডিবি। সবচেয়ে পুরনো এই বিতরণ সংস্থার গ্রাহকরা বছরে ৭৪৭ মিনিট বিদ্যুতের বাইরে ছিল। সবচেয়ে কম বিভ্রাটের শিকার হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি ও নারায়নগঞ্জ এলাকার গ্রাহকরা। ওই এলাকায় বিতরণের দায়িত্বে থাকা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) গড়ে ২৪২ মিনিট লোডশেডিং দিয়েছে।
ঢাকার উত্তরাংশে বিতরণের দায়িত্বে থাকা ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) লোডশেডিং হয়েছে ৩১২ মিনিট। রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের বাসিন্দারা গড়ে ৩৯৭ মিনিট লোডশেডিংয়ের শিকার হয়েছেন। খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের বিতরণ কোম্পানি ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) গড়ে ৩৩১ মিনিট লোডশেডিং করেছে।
সিস্টেম অ্যাভারেজ ফিকোয়েন্সি ডিউরেশন ইনডেক্সে (সাইফি) তলানীতে অবস্থান করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ শহরাঞ্চলের বিতরণের দায়িত্বে এই সংস্থাটির গ্রাহকরা সবচেয়ে বেশি লো-ভোল্টেজের শিকার হেয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের রিপোর্টে বলা হয়েছে বিপিডিবির গ্রাহকরা গড়ে (বছরে) ৪৭.৪৫ দফায় লো-ভোল্টেজের শিকার হয়েছেন। এরপরেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং প্রদানকারি বিতরণ সংস্থা আরইবি।
সবচেয়ে বৃহৎ বিতরণ সংস্থা আরইবি ৪৩ দফা, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানিতে (নেসকো) লো-ভোল্টেজ হয়েছে ৩২.৯৫ দফায় এবং ওজোপাডিকে ১৭.৬৬ দফায় লো-ভোল্টেজ বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন এসব হিসেব সংস্থার নিজের হাতে করা। বাস্তবতার সঙ্গে এর যথাযথ মিল নাও হতে পারে। সংস্থাগুলোর এখানে ফলাফল প্রভাবিত করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেল’র মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, সরকার এই গণনার পদ্ধতি অটোমেশনের কাজ শুরু করেছে। ডিপিডিসি সাবস্টেশন অটোমেশন করেছে, অন্যদিকে ওজোপাডিকো ডিজিটাল মিটার স্থাপন করছে সেখান থেকে সংক্রিয়ভাবে তথ্য পাওয়া যাবে। তখন এসব তথ্যের সঠিক চিত্র পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, সরকার এতোদিন সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এখন মানসম্মত ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ করছে। দিন যাবে সবকিছু উন্নত হবে, গ্রাহক সেবার মান বাড়বে। আগে প্রাকৃতিক বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে ঠিক হতে অনেক সময় লেগে যেতো। এখন কিন্তু দ্রুতই বিদ্যুৎ চলে আসছে।
ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেন, বেশিরভাগ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ব্যবসার কথা বিবেচনা করে, গ্রাহকের কথা মাথায় রেখে খুব কম প্রকল্পই নেওয়া হয়েছে। অতীতে সিস্টেম লস কমানোর কথা বলে যতো প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তার সুবিধা কি গ্রাহকরা পেয়েছে! এখন সিস্টেম লস ক্যালকুলেশনেও জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হচ্ছে। যার বোঝা বহন করতে হচ্ছে ভোক্তাকে। যে প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ব্যায় বাড়ে তাকে আধুনিক প্রযুক্তি বলা যায় না।
আধুনিকায়নের নামে নানা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, বিতরণ ব্যায় ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে ১.৪৫ টাকা (আরইবি) হয়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়েছে, গ্রামের লোকজন বিদ্যুৎ পায় না। বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসে থাকায় ভাড়া পরিশোধ করতে গিয়ে গড় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যার কারণে দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে বিদ্যুতের দাম, তাহলে লাভ কি হলো। আদর্শিক প্লান তৈরি করা যায় নি, যে কারণে আজকে এই দুরাবস্থা।
গ্রাহকসেবা ও কোয়ালিটি বিদ্যুতের সূচক হিসেবে বিবেচনা করা হয় সাইদি ও সাইফিকে। সাইদি ও সাইফি দিয়ে প্রকৃত অবস্থা নির্ণয় করা হয় উন্নত বিশ্বে। এতোদিন বিতরণ সংস্থাগুলো ম্যানুয়ালি এসব তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট দিতেন। খোদ বিদ্যুৎ বিভাগই এসব রিপোর্টের সঙ্গে একমত হতে পারছেন না।