১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এটি প্রবর্তন হলে ১৮ বছর বয়সী একজন নাগরিক যদি মাসে ১ হাজার টাকা করে চাঁদা দেয় এবং ৬০ বছর বয়স পযর্ন্ত চলমান রাখে তাহলে অবসরের পর প্রতি মাসে সে ৬৪ হাজার ৭৭৬ টাকা করে পেনশন পাবেন।
যদি ৩০ বছর বয়সে চাঁদা দেওয়া শুরু করেন এবং তা ৬০ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখে, তাহলে অবসরের পর প্রতি মাসে ১৮ হাজার ৯০৮ টাকা করে পেনশন পাবেন বলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছে। তিনি বলেন, চাঁদা দেওয়ার পরিমাণ ও মেয়াদকালের উপর পেনশন ভাতার পরিমাণ নির্ভর করবে।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রস্তাবিত ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’র বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা’ বিষয়ে প্রণীত কৌশলপত্রের ওপর অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি চালুর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এবং সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। সম্প্রতি কৌশলপত্রটি প্রধানমন্ত্রীর সামনে উপস্থাপন করা হয়। তিনি কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনাগুলো অন্তর্ভুক্ত করে শিগগিরই একটি সর্বজনীন পেনশন আইন প্রণয়ন করা হবে। আইন প্রণয়ন হলে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা পাওয়া যাবে। এটি নিয়ে আমরা এখন কাজ করছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে Demographic dividend (জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ) এর সুবিধা ভোগ করছে। আমাদের বর্তমান গড় আয়ুষ্কাল ৭৩ বছর যা ২০৫০ সালে ৮০ বছর এবং ২০৭৫ সালে ৮৫ বছর হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় আগামী তিন দশকে একজন কর্মজীবী ব্যক্তি অবসর গ্রহণের পরও গড়ে ২০ বছর আয়ু থাকবে। বাংলাদেশে বর্তমানে Dependency ratio ৭.৭ শতাংশ, যা ২০৫০ সালে ২৪ শতাংশে এবং ২০৭৫ সালে ৪৮ শতাংশে উন্নীত হবে। গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি ক্রমবর্ধমান Dependency ratio বিবেচনায় আমাদের Old age-এর নিরাপত্তা হিসেবে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা খুবই জরুরি।
মুস্তফা কামাল বলেন, প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য দিক ১৮-৫০ বছর বয়সী সব কর্মক্ষম নাগরিক সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অংশ নিতে পারবেন। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীরা এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের আপাতত নতুন জাতীয় পেনশন ব্যবস্থার বাইরে রাখা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সরকার যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।