চার মাসেই অপ্রত্যাশিত ব্যয় খাতের অর্থ শেষ!

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 21:34:23

চলতি অর্থ বছরে বাজেটের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনার তহবিলের জন্য বরাদ্দ ২০০০ টাকা প্রথম চার মাসেই শেষ হয়ে গেছে। যদিও গত ১০ বছরের মধ্যে বাজেট ব্যবস্থাপনায় এমনটা হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচনে অতিরিক্ত ব্যয় মেটাতে অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাতের বরাদ্দ থেকে সরাসরি কোনো অর্থ নেওয়ার আগেই অক্টোবরের শেষে এ খাতের অর্থ খরচ হয়ে গেছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছিল। কিন্তু বাজেট সংশোধনের পর এই খাতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার মতো অর্থ ছিল। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এ খাত থেকে খরচ হয়ে গেছে এক হাজার ৩৬৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা বা বরাদ্দের ৬৮ শতাংশ। আর অবশিষ্ট অর্থ অক্টোবরের মাসের শেষে ফুরিয়ে গেছে।

মূলত দেশে আকর্ষিক কোনো দুর্ঘটনায় বিশেষ করে ঘুর্ণিঝড়, বন্যা, খরা বা শেয়ার বাজারের ধস হলে প্রয়োজন মেটাতে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু এ খাত থেকে বরাদ্দ নিতে মন্ত্রণালয় বা পরিকল্পনা কমিশনের কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। পরিকল্পনা কমিশনেরও বিশেষ সহায়তা তহবিলে ২০০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বার্তা ২৪.কম’কে বলেন, ‘চলতি বাজেটের এ থোক বরাদ্দ এতো তাড়াতাড়ি শেষ হওয়া অস্বাভাবিক। এখন আকর্ষিক কোনো ঘটনা ঘটলে অর্থ যোগান দিতে সরকার বেকাদায় পড়বে। থোক বরাদ্দ থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্থ খরচ করা উচিৎ নয়। বিশেষ করে এ অর্থের পরিমাণ যদি হয় ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার মতো হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের এখন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে টাকা নিয়ে নির্বাচনের ব্যয় মেটাতে হবে। তাছাড়া সরকারের কোনো উপায় নাই।’

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৯১টি ভোট কেন্দ্রে ৪ লাখ ৮২ হাজার আনসার-ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। এতে অতিরিক্ত খরচ হবে ২৪৩ কোটি টাকা।

অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত থেকে ছাড় করা অর্থের হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি টাকা দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ওউচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণায়লের আওতায় কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডের আওতায় জুন ২০১৭ পর্ষন্ত অনিষ্পন্ন আবেদনসমূহ নিস্পত্তিতে।এসব খাতে মোট ছাড় করা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।

এছাড়া পুরাকীর্তি রোজ গার্ডেন কিনতে ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে চ্যান্সারি ভবন কিনতে ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকা, রোমের চ্যান্সারি ভবন ওরাষ্টদূতের বাস ভবন কিনতে ১৩৫ কোটি টাকা, পাটকল শ্রমিকদের মজুরি ও বেতন-ভাতা পরিশোধে ১০০ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার বিভাগের দুইপ্রকল্পে ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টকে ৭৯ কোটি টাকা, সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রীর বড় ভাই আবুল হাসনাত আবদুল্লাহকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় ব্যয় ব্যবস্থাপনায় ২০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়া অবশিষ্ট অর্থ থেকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে চলতি অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটে ৯৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর