মিটার বিহীন আবাসিক গ্রাহকদের এতদিন (দুই চুলা) ৭৮ ঘনমিটার গ্যাসের বিল আদায় করা হলেও এবার ৬০ ঘনমিটার করার প্রস্তুতি চলছে। সে কারণে আবাসিকে দাম বৃদ্ধির পরিবর্তে কমে আসতে পারে বলে বিইআরসি সুত্র জানিয়েছে।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির গণশুনানিতে বিইআরসি কারিগরি কমিটি এমন সুপারিশ দিয়েছে। কমিটি বলেছে, একচুলা ৫৫ ঘনমিটার ও দুই চুলা ৬০ ঘনমিটার ভিত্তিমূল্য হওয়া উচিত। কমিটির ওই প্রস্তাবে গ্যাসের কোন কোম্পানিই আপত্তি করেনি গণশুনানিতে। যে কারণে মিটার বিহীন আবাসিক গ্রাহকের একচুলা ৫৫ ঘনমিটার ও দুইচুলা ৬০ ঘনমিটার নির্ধারণ করার বিষয়টি সময়ের বিষয় বলে মনে করা হচ্ছে।
আর যদি তাই হয়, তাহলে গ্রাহকের মাসে প্রায় সোয়া ২’শ টাকা বিল কমে আসবে। ৬ বিতরণ কোম্পানি মিলে ৩৫লাখ এমন মিটার বিহীন গ্রাহক রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে যথাক্রমে মাসে একচুলা ৯৫০ ও দুই চুলা ৯৭৫ টাকা হারে বিল আদায় করা হচ্ছে।
গণশুনানিতে বলা হয় প্রি-পেইড গ্রাহকদের মাসে ৩০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা খরচ হচ্ছে।অন্যদিকে মিটার বিহীন গ্রাহকদের কাছে দ্বিগুণের বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। এটাকে অন্যায় বলে মন্তব্য করে ক্যাব। এ সময় বিইআরসির চেয়ারম্যান তিতাস গ্যাসের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহকে প্রশ্ন করেন, প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের খরচ কত পড়ছে। জবাবে তিতাস গ্যাস এমডি বলেন, সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা। সে হিসেব করলে ইউনিট ব্যবহারের পরিমান দাঁড়ায় ৪৭ ঘনমিটারে।
২০১৬ সালে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পর থেকেই বিষয়টি সামনে চলে আসে। এর আগে বলা হতো আবাসিকের মিটার বিহীন গ্রাহকরা অনেক বেশি গ্যাস ব্যবহার করছে। এতে কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের পর ফলাফল বিপরীতে দেখে উল্টো পথে হাটা শুরু করে গ্যাস কোম্পানিগুলো। তারা প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে দীর্ঘসুত্রিতার পথে পা বাড়ায়। ২০১৯ সালে বিইআরসির পক্ষ থেকে দ্রুত প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হলে সেটাও থেকেছে উপেক্ষিত। ৩৮ লাখ গ্রাহকের মধ্যে মাত্র ৩ লাখ ২০ হাজার গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার পেয়েছে। কোম্পানির হাতে না রেখে গ্রাহকরা যাতে নিজেরা কিনে বসাতে পারেন তারও নির্দেশনা দেয় বিইআরসি। অনেক পরে নীতিমালা হলেও নানা কৌশলে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো নিজেরা স্থাপনের প্রকল্পের কথা জানান। প্রি-পেইড মিটার স্থাপন বিলম্বিত হওয়ার বিইআরসি চেয়ারম্যান গ্যাস কোম্পানিগুলোকে তিরস্কার করেন।
জালালাবাদ গ্যাস কোম্পানির গণশুনানির দিনে (২৪ মার্চ) বিষয়টি সামনে এলে, কোম্পানিটির এমডি নানা যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই টেকনিক্যাল, বিদ্যুতের মতো গ্যাসে গ্রাহকদের কিনে স্থাপনের বিষয়টি জটিল। এসময় বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, আমাকে মহাভারত, হিমালয়ের চুড়া দেখাতে আসবেন না। সরকার নীতিমালা করে দিয়েছে আল্লাহর ওয়াস্তে গ্রাহকদের হাতে দিয়ে দেন। আপনারা যে মিটার বসাতে ২২ হাজার টাকা খরচ করছেন, গ্রাহকরা নিজে কিনলে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার বেশি খরচ পড়বে না। ভোক্তারা শুনানিতে অংশ নিয়ে বলেন, যখন তারা দেখলেন প্রি-পেইডে কম বিল আসছে, তখনেই পকেট কাটার জন্য গড়ে বিল আদায়ের পথে হাটছেন। মিটার বিহীন গ্রাহকদের সিলিং ৫০ করাটাই হবে যুক্তিপুর্ণ। সিলিং কমানো না হলে তারা প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে আগ্রহী হবে না।
এসব কারণে মিটার বিহীন আবাসিক গ্রাহকদের সিলিং কমে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। আর সিলিং কমে গেলে দামও কমে আসবে। আরেক হিসেবে অংক কষলেও দাম কমে আসে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিষয়ে বিইআরসি কারিগরি কমিটি গড়ে ২০শতাংশ দাম বৃদ্ধির পক্ষে মতামত দিয়েছে। ৬০ ঘনমিটারের বিল ২০ শতাংশ হারে বাড়লে ১৫১ টাকা হয়। অন্যদিকে কমে যাওয়া ১৮ মিটারের দাম হয় ২২৫ টাকা কম। গ্যাসের দাম বেড়ে গেলেও ৭৫ টাকা কমে যায় বিল।