প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে তিন গুণ ভাড়া নিচ্ছে ভবন মালিক!

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 22:59:27

বেসরকারি প্রিমিয়ার ব্যাংকের দুইটি শাখার ভাড়া বাবদ অস্বাভাবিক ব্যয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যাংকটির গুলশান ও বনানী শাখা থেকে ভাড়া বাবদ বছরে ১২ কোটি ১২ লাখ টাকা আয় করেছেন ভবন মালিক বলে জাতীয় দৈনিক সমকালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে। প্রচলিত বিক্রির দর, আশপাশের ভবনের ভাড়ার হার হিসেবে যা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য না। শাখা দুইটি থেকে প্রায় দ্বিগুণ-তিন গুণ বেশি দরে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর এই টাকা পকেটে পুড়ছেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ডা. এইচ বি এম ইকবালের পরিবার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডা. এইচ বি এম ইকবাল ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণে রেখে, নিজেদের ভবনে ফ্লোর ভাড়া নিয়ে সেই টাকা পরিবারে ঢুকাচ্ছেন। কারণ প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ ডা. এইচ বি এম ইকবাল পরিবারের হাতে। ডা. ইকবাল দীর্ঘদিন ধরে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান। তার এক ছেলে মঈন ইকবাল বর্তমানে ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং আরেক ছেলে মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল পর্ষদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান। তার স্ত্রী মমতাজ ইকবালও ছিলেন ব্যাংকটির পরিচালক।

জানা গেছে, প্রিমিয়ার ব্যাংকটির গুলশান শাখা ৯ বছর ও বনানী শাখা ৬ বছরের চুক্তিতে ডা. ইকবালের মালিকানাধীন ভবনে ফ্লোর ভাড়া নিয়েছে। চুক্তি অনুসারে এই সময়ে শাখা দুটির ভাড়া বাবদ ব্যয় হবে ৯৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। যা প্রচলিত ভাড়ার চেয়ে তিন গুণ বেশি।

বছরে শাখা দুইটি থেকে ভাড়া বাবদ ১২ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। সে হিসেবে গুলশান শাখার ভাড়া প্রতি বর্গফুট ৮ হাজার ৫৬৮ টাকা, আর বনানী শাখার ৪ হাজার ৮২৪ টাকা করে পড়ে। তবে এসব এলাকায় প্রচলিত দর ১ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের গুলশান শাখার অবস্থান ডা. ইকবালের মালিকানাধীন রেনেসাঁস হোটেল, ৭৮ গুলশান অ্যাভিনিউতে। এই হোটেলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার দক্ষিণ পাশে গুলশান শাখার অবস্থান। দুই ফ্লোর মিলে আয়তন ১০ হাজার ২০০ বর্গফুট। প্রতি বর্গফুটের মাসিক ভাড়া ৭১৪ টাকা। প্রতিবছর যা দাঁড়ায় ৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের ৭ মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ৬ মার্চ পর্যন্ত ৯ বছরের জন্য ভাড়ার চুক্তি রয়েছে। ফলে ৯ বছরে শুধু এর ভাড়া বাবদ ব্যাংকের ব্যয় হবে ৭৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। তবে বর্তমান বাজারদরে তা দিয়ে ওই এলাকায় প্রায় তিন গুণ ফ্লোর কেনা সম্ভব।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের গুলশান শাখার কয়েক গজ দূরত্বে মধুমতি ব্যাংকের গুলশান শাখা। মোট ৫ হাজার ৭০০ বর্গফুটের শাখায় প্রতি বর্গফুট ভাড়া ২৯৫ টাকা। যা প্রিমিয়ার ব্যাংকের গুলশান শাখার ভাড়া অন্য ব্যাংকের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি। গুলশান এলাকায় আরো খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি ব্যাংকের ভাড়ার থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ভাড়া দুই থেকে তিন গুণ বেশি।

গুলশান শাখার মতো প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখাও ডা. ইকবালের নিজ মালিকানাধীন ভবনে। ৪২ কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউর ইকবাল সেন্টারে থাকা শাখাটি মাসে প্রতি বর্গফুটের জন্য ভাড়া দিচ্ছে ৪০২ টাকা। মোট সাত হাজার বর্গফুট জায়গা ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ছয় বছরের জন্য ভাড়ার চুক্তি রয়েছে। এ শাখার ভাড়া বাবদ বছরে ব্যাংকটি ব্যয় করছে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

ছয় বছরে দিতে হবে ২০ কোটি ২৬ লাখ টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংকের বনানী শাখার উল্টো দিকে ব্যাংক এশিয়ার বনানী শাখা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বর্গফুট ১৪৫ টাকা ভাড়া দিচ্ছে ব্যাংক এশিয়া। কয়েক গজের ব্যবধানে প্রতি বর্গফুট ভাড়ায় প্রায় তিন গুণ ব্যবধান।

এসব বিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ডা. এইচ বি এম ইকবালসহ ব্যাংকটির অন্যান্য কর্মকর্তারা কোন মন্তব্য করতে চাননি।

এদিকে ব্যাংকটি দুই শাখার ভাড়া নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোন ধরনের আপত্তি তোলা হয়নি। আর তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভাড়ার নামে ব্যাংক থেকে টাকা বের করে নেওয়া ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক তথ্য যাচাই করে। প্রয়োজনে সরেজমিনে যাছাই করা হয়। তবে প্রিমিয়ার ব্যাংকের শাখা দুইটির আশপাশ পাশের ভবনের ভাড়া কেমন এ বিষয়ে জানা হয়নি। এখন অস্বাভাবিক কিছু পেলে নীতিগত বিভাগে খতিয়ে দেখবে।

প্রিমিয়ার ব্যাংকের দুইটি শাখার ভাড়া বাবদ যে টাকা সরানো হচ্ছে। তা প্রকৃতপক্ষে অনেক কম। প্রিমিয়ার ব্যাংকের গুলশান শাখা যে রেনেসাঁস হোটেলে অবস্থিত, তার ঠিক উল্টো পাশে কনকর্ড সিলভি হাইটস নামে একটি নতুন ভবন হয়েছে। এই ভবনটির চতুর্থ তলার ৩ হাজার ২০০ বর্গফুট জায়গা ভাড়া দেওয়া হবে। প্রতি বর্গফুট ১৮০ টাকায় ভাড়া দেওয়া হবে। আলোচনার ভিত্তিতে কমানোরও সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে ফ্ল্যাট ভাড়া এবং বেচাকেনার অনলাইন প্ল্যাটফর্মও খোঁজ নেওয়া হয়। কোন ভবনের ফ্লোর ভাড়া এত বেশি পাওয়া যায়নি।  

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) কর্মকর্তারা জানান, গুলশান অ্যাভিনিউতে বর্তমানে প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা দরে ফ্লোর বিক্রি হয়। আর বনানী এলাকায় পাওয়া যায় ৩০ হাজার টাকা দরে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর