প্রযুক্তির ব্যবহার ও ভোক্তাদের অভ্যাস পরিবর্তনের সমন্বয়ের প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনার অভিনব সব উদ্যোগ চালুর অংশ হিসেবে দেশে প্রথমবারের মতো ‘রিফিল মেশিন’চালু করেছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল)।
নতুন এই মেশিনটির মাধ্যেমে ভোক্তারা রিন ও ভিম লিকুইড রিফিল করতে পারবে। খালি কনটেইনার (পাত্র), ব্যবহার করা রিন ও ভিমের পুরোনো বোতল, পানির বোতল বা বায়ুরোধী জারের মাধ্যেমে বিশেষ ছাড়ে পুনরায় পূর্ণ (রিফিল) করা যাবে এই দুটি পরিচ্ছন্নতাকারী পণ্য।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে আজ ২২ জুন বুধবার, ২০২২ ঢাকায় ইউনিমার্ট গুলশানে রিফিল মেশিনটির উদ্বোধন করেন। এ সময়ে মাসুদ ইকবাল মোঃ শামীম, পরিচালক (পরিবেশগত ছাড়পত্র) পরিবেশ অধিদপ্তর, ইউনিলিভার বাংলাদেশে লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাভেদ আখতার এবং ইউনিমার্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুর্তোজা জামানসহ ইউনিলিভার বাংলাদেশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ইউবিএল ও ইউনিমার্ট যৌথভাবে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে।
বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার তার সাসটেইনেবিলিটি স্ট্র্যাটেজি বা টেকসই কৌশল অনুযায়ী আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে পণ্য প্যাকেজিংয়ে 'ভার্জিন প্লাস্টিকের' ব্যবহার (প্রথমবার ব্যবহার হয় এমন) কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্য নিয়ে ইউবিএল মাঠে নেমেছে, প্লাস্টিক সংগ্রহের পাশাপাশি রিফিল মেশিন চালুর মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনা যায়।
নতুন এই মেশিন ব্যবহার করা খুব সহজ। ফলে ভোক্তারা নিজেরাই অনায়াশে এটি ব্যবহার করতে পারবেন। তাঁরা টাচ স্ক্রিনে খুব সহজ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে পুরনো কনটেইনার, বোতল ও বয়ামের মতো পাত্রে ২০০ মিলি লিটার (এমএল) থেকে শুরু করে ৪০০ এমএল, ৫০০ এমএল, ৮০০ এমএল, এক লিটার, দেড় লিটার ও দুই লিটার পর্যন্ত তরল রিন ও ভিম ভরে নিতে পারবেন। এভাবে ভোক্তারা একই বোতল বারবার ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। এরফলে দেশে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহারের চর্চা জোরদার হবে এবং প্যাকেজিং এ নতুন প্লাস্টিকের ব্যবহার কমবে।
ইউনিলিভারের গবেষণা ও উন্নয়ন দল (আর অ্যান্ড ডি) একটি বৈশ্বিক স্টার্টআপকে সঙ্গে নিয়ে এই মেশিনের উদ্ভাবন ঘটিয়েছে। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মেট্রোলজি ডিভিশন (পরিমাপণবিদ্যা বিভাগ) মেশিনটির মান যাচাই-যাচাই করেছে।
প্রাথমিকভাবে ইউনিলিভার বাংলাদেশ রাজধানীর গুলশান-২ এর ইউনিমার্ট এবং মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির আগোরা সুপারসপে দুটি মেশিন স্থাপন করেছে। পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা এই দুটি মেশিনের ব্যবহার সফল হলে পরবর্তীতে এই উদ্যোগ আরও সম্প্রসারণ করা হবে। এছাড়া ইউবিএল গ্রামীণ এলাকার ভোক্তাদের লক্ষ্য করে এই বছরের শেষের দিকে পরীক্ষামূলকভাবে আরেকটি প্রকল্প চালুর ব্যাপারে এখন কাজ করে চলেছে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাভেদ আখতার এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “প্লাস্টিক বর্জ্য বেড়ে যাওয়ার মূল কারণগুলো ঠেকাতে হলে আমাদের প্যাকেজিং সম্পর্কে আলাদাভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। আমাদের এখন নতুন নতুন উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, যা বিদ্যমান ডিজাইন বা নকশা, উপকরণ ও ব্যবসায়িক মডেলকে চ্যালেঞ্জ করে। আমাদের অগ্রাধিকার হল, মৌলিকভাবে প্যাকেজিং সম্পর্কে পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করা এবং প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার ও রিফিল করার মতো নতুন উপায় উদ্ভাবনের পথ প্রশস্ত করা। একটি ‘পরীক্ষণ, শিখন ও পরিশোধন’ - এর মানসিকতা নিয়েই আমরা সমাধান উদ্ভাবন করেছি, যা মানুষকে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমাতে সাহায্য করবে। এই প্রক্রিয়া এখনো প্রাথমিক ধাপে রয়েছে। কিন্তু পুনরায় পূর্ণ করা (রিফিল) ও পুনর্ব্যবহারের মতো উপায়গুলোকে বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তা ভোক্তাদের কাছে সাশ্রয়ী খরচে সুলভ বা সহজলভ্য করতে হবে। এভাবে আমরা নিজেদের উপায় ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে প্লাস্টিকের ব্যবহারে স্থায়ী পরিবর্তন আনতে সক্ষম হব বলে আশা করি। প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা এখন সর্বমহলে গুরুত্ব পাচ্ছে এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশ প্লাস্টিকের জন্য একটি সার্কুলার অর্থনীতি তৈরিতে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পুন:চক্রায়নের মাধ্যমে প্লাস্টিককে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার পাশাপাশি রিফিলযোগ্য ও সাধারণভাবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্যাকেজিংয়ে মনোযোগ দিলে সেটিও গেম চেঞ্জার হয়ে উঠতে পারে, যা বিশ্বের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।”