নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নে। চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর এই বৃহৎ সংগঠনটির সিদ্ধান্ত মানতে ব্যর্থ হচ্ছেন কোনো কোনো এলাকার শ্রমিকবৃন্দ। ফলে দেখা দিয়েছে চা শ্রমিকনির্ভর এই সংগঠনে যোগ্যনেতৃত্বের অভাব।
সোমবার (২২ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার চা বাগানের বেশিরভাগ শ্রমিক যোগ দেন তাদের দৈনিক কাজে। চা বাগানের সেকশনে একটি বৃহৎ অংশের শ্রমিকরা যখন কাজে ব্যস্ত তখনই কিছু সংখ্যক শ্রমিক বিকেলে চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতাদের আদেশ অমান্য করে কর্মবিরতিতে নামেন।
তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন এটা কোন টেলিভিশনে দেখেনি বা শোনেনি। নেতারা এটি প্রধানমন্ত্রীর নামে মিথ্যে নিদের্শনা দিয়ে আমাদের কাজে যেতে বলছেন। ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে তারা আবারও আন্দোলন শুরু করেন।
এদিকে, চলমান আন্দোলন নিরসনে জেলা প্রশাসন, শ্রম অধিদফতরের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়। কোন বৈঠকেই বিষয়টি সুরাহা না হলে গত শনিবার শ্রীমঙ্গল শ্রম অধিদফতরে এক বৈঠকে জানানো হয় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে গেছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে যাবেন তিনি বলেছেন সেখান থেকে এসে গণভবনে শ্রমিকদের নিয়ে বসবেন এবং তাদের কথা শুনে তাদের সুযোগ সুবিধার বিষয়টি দেখবেন। এটি প্রথমে চা শ্রমিক নেতারা মানলেও পরে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
সর্বশেষ রোববার (২১ আগস্ট) রাত ৯টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে দীর্ঘ বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে চলমান মজুরিতেই আমরা কাজে ফিরে যাবো। পরবর্তী বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যেন আমাদের মজুরি ৩০০ টাকা করার বিষয়টি দেখেন। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের নির্দেশ মোতাবেক সারাদেশের চা শ্রমিকদের চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করে চা শ্রমিকরা রোববার সকাল থেকে কাজে ফিরে যান। শ্রীমঙ্গল উপজেলার বেশ কয়েকটি বাগানে দেখা যায় চা শ্রমিকরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে কাজ করছেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন (বাচাশ্রই) কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক এবং শ্রমিক নেতা পরেশ কালেন্দি বলেন, আমরা কাজে যোগ দিচ্ছি। আশা প্রকাশ করছি প্রধানমন্ত্রী আমাদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
কিন্তু, এই দাবিকে না মেনে একটি অংশ জেলার বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনে নামে তারা ৩০০ টাকা মজুরি দাবি করেন। শ্রীমঙ্গল খাইছড়া চা বাগানের শ্রমিক সন্তান রাঘব গোয়ালা জানান, ৩০০ টাকা মজুরি দেওয়ার কথা বলে আমাদের আন্দোলনে নামিয়েছে। এখন ১২০ টাকা মজুরিতেই আবার কাজে যাবো এটা কেমন কথা? তাহলে মিছিল করলাম কেন?
অবান তাঁতী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা আমরা সরাসরি শুনিনি। এটা নেতাদের ভাওতাবাজি। আমরা মজুরি ৩০০ টাকা চাই।
মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গল সাতগাঁও এলাকা, ঢাকা-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক সড়কে, শ্রীমঙ্গল লেবার হাউজের সামনে, কমলগঞ্জের সমশেরনগর, মৌলভী চা বাগানসহ বিভিন্ন চা বাগানে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বাচাশ্রই) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, আমাদের কথা কিছু সংখ্যক শ্রমিকরা মানছেন না। সম্মানিত চা শ্রমিকদেরকে কেউ কেউ ষড়যন্ত্রমূলক পরামর্শ দিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করতে চাচ্ছেন। আমরা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে বলছি, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী বিদেশসফর শেষে দেশে ফিরে আসলেই ভিডিও কনফারেন্সে আমরা উনার সঙ্গে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাবো।