হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণের বাড়তি ব্যয় সরকারকে পরিশোধের আবদার ওরিয়নের

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 22:27:00

মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণে অতিরিক্ত এক হাজার ৭০৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং ব্যাংক ঋণের সুদ সরকারি খাত থেকে পরিশোধ বা বন্ডের মাধ্যমে সংস্থান করার আবদার জানিয়েছে ওরিয়ন গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

সম্প্রতি সালিসি ট্রাইবুনালের রায় নিয়ে অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার ও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ইউনিট প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার কর্তৃপক্ষ। তবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মধ্যে সালিসি ট্রাইব্যুনালের রায় হয় গত ৩০ অক্টোবর। রায়ে উল্লেখ করা হয়, অতিরিক্ত খরচ ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ বহন করবে। এজন্য সংস্থাটি এক হাজার ৪৩৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে দেবে। এর সাথে যুক্ত হবে ২ শতাংশ হারে সুদ।

আরো জানা গেছে, ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিলেও তাদের নিজস্ব কোনো বিনিয়োগ নেই। মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অর্থেই মেয়র মোহাম্মদ হানিফ (গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী) ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। এমনকি ফ্লাইওভারের আয়ের ওপর কর অব্যাহতি ও বিলাসবহুল গাড়ি কেনায় শূন্য শুল্ক সুবিধা আদায় করে ওরিয়ন গ্রুপ। এমনকি সরকারের কাছে জমিও চেয়েছিল কোম্পানিটি। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশন জমি দিতে রাজি হলেও কোনো কারণে তা হস্তান্তর করা হয়নি। পরবর্তীতে বারবার প্রকল্প সংশোধন ও সম্প্রসারণ করায় ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৮০ কিলোমিটার। আর কাজের পরিমাণ বাড়ায় নিমার্ণ কাজ পিছিয়ে যায় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে  অতিরিক্ত এক হাজার ৭০৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়। যদিও প্রকল্পের প্রকৃত ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩৭৮ দশমিক ৩১ কোটি টাকা।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওবায়দুল করিম প্রথম সফল পিপিপি প্রকল্প টেকসই রাখার স্বার্থে ফ্লাইওভার নির্মাণের অতিরিক্ত এক হাজার ৭০৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং আরোপিত সুদ সরকারি খাত থেকে পরিশোধ অথবা বন্ডের মাধ্যমে সংস্থান করতে অর্থমন্ত্রীর কাছে আবদার জানান। আবদারে তিনি জানান, সরকার পিপিপি প্রকল্পে কোনো অর্থ ব্যয় করেনি। এমনকি প্রতি বছরে ফ্লাইওভার দিয়ে ন্যূনতম ৪২ হাজার ২৮৩টি গাড়ি চলাচলের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। ফলে সরকারকে প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হবে।

জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছিলেন, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার অনেক ঢাকঢোল বাজিয়ে শুরু করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তার গুরুত্ব তেমন থাকেনি। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। তার হিসাব নিকাশ চূড়ান্ত করা দরকার। সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ), রাস্তা বিভাগ, সেতু বিভাগকে বসে টোল আদায়ের বিষয়টি সমাধান করা উচিৎ।

জানা গেছে, ফ্লাইওভার নির্মাণে ওরিয়ন গ্রুপকে ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা অর্থায়ন করে ছয়টি ব্যাংক ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ৫০০ কোটি, রূপালী ব্যাংক ৫৫০ কোটি, জনতা ব্যাংক ৬০০ কোটি ও অগ্রণী ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। এছাড়া ৫০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।

এ সম্পর্কিত আরও খবর