আরও কমল জ্বালানি খাতের বরাদ্দ!

, অর্থনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 18:13:02

ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেই জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বরাদ্দ অর্ধেক কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে মাত্র ৯৯৪ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। যা ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ছিল ১৮৭০ কোটি টাকা, আর সংশোধিত বাজেটের আকার ছিল ১৯০২ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট এই প্রস্তাবনা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

মন্ত্রী তার বক্তৃতায় দেশীয় খনিজ সম্পদকে অনেকটাই পাশ কাটিয়ে গেছেন। জ্বালানি তেলের মুজদ সক্ষমতা ‍বৃদ্ধি, পাইপলাইনের লম্বা ফিরিস্তি দিলেও দেশের চরম গ্যাস সংকট এবং তার মোকাবেলায় তেমন কোন দিকনির্দেশনা নেই। যেমনটি বিগত বাজেটেও দেখা যায় নি। তিনি বলেছেন, দেশের একমাত্র তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর ফলে দেশীয় গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিসেম্বর ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে আরও ৬১৮ মিলিয়ন গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।

গত বাজেটের মতো এবারও এলএনজি আমদানির ফিরিস্তি দিয়েছেন। অথচ জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা অনেকদিন ধরেই বলে আসছেন, জ্বালানি বিভাগকে গুরুত্ব কম দেওয়ার কারণে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। প্রাথমিক জ্বালানির সংকটের কারণে বসে থাকছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে করে একদিকে জনগণ লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, অন্যদিকে বসিয়ে রেখেও কোটি কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচেছ।

বাংলাদেশের ভু-খন্ডে গত ১১২ বছরে(প্রথম কূপ খনন ১৯১০ সালে) ৯৮টি অনুসন্ধান কূপ খননের মাধ্যমে ২৯টি গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কার হয়েছে। এর বাইরে রয়েছে মোবারকপুর ও কশবার মতো কয়েকটি ফিল্ড। যেগুলোতে গ্যাসের আঁধার পেলেও বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য নয় বলে ঘোষণা করা হয় নি। প্রতিবেশী ত্রিপুরা রাজ্যে ছোট্ট আয়তনে কূপ খনন করেছে ১৬০টি। তারা ১৬০টি কূপ খনন করে মাত্র ১১টি গ্যাস ফিল্ড আবিষ্কার করেছে,এরমধ্যে ৭টি থেকে উৎপাদন করছে।

সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার‌্যক্রম এখনও প্রাথমিক ধাপেই রয়েছে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে গভীর সমুদ্র এবং দেশের পশ্চিমাঞ্চল থেকে গেছে এখনও হিসেবের বাইরে। সাগরে আমাদের পাশের সীমানা থেকে মায়ানমার গ্যাস উত্তোলন করছে,অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলের পাশে অশোকনগরে তেল আবিস্কার করেছে ভারত।এতে করে এতোদিন যারা দেশের পশ্চিমাঞ্চলে (রংপুর, রাজশাহী এবং খুলনা অঞ্চল) গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই মনে করতেন তারাও এখন নড়েচড়ে বসেছেন।

বাংলাদেশ প্রতি ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারের একটি করে কূপ খননের লক্ষ্যে কাজ করছে, আমেরিকা প্রতি ১৪ বর্গকিলোমিটারের ১টি এবং ভারত ১৮.৬ বর্গকিলোমিটারের ১টি কূপ খনন মানদন্ড বিবেচনায় কাজ করছে। শুধুমাত্র অনুসন্ধান কার‌্যক্রমের ঢিলেমির কারণে দেশকে চরম মাসুল দিতে হচ্ছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত স্থবিরতা দেশকে চরম সংকটের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। গ্যাস সংকট সামাল দিতে গিয়ে বিদেশ থেকে উচ্চদরে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। যার ফল এখন ভুগতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানো। বাংলাদেশে প্রচুর গ্যাস প্রাপ্তির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও বাজেটে সেই প্রত্যাশার কোনই প্রতিফলন দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর