দফায় দফায় সময় নিয়েও যেসব সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প কাজ এগিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের চুক্তি বাতিলের নির্দেশনা দিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় তিনি এমন নির্দেশনা দেন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের মনিটরিং আরও জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রয়োজনীয় দাফতরিক কাজে পুর্ণাঙ্গ সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
বৈঠকে বেসরকারি খাতের ২৪টি প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বৈঠকে সিলেট (গোয়াইনঘাট) ৫ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রকল্পটির এলওআই ইস্যু করা হয় ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট। কাজের কোন অগ্রগতি না থাকায় পূর্ববর্তী (১ জানুয়ারি ২০২৩) মাসিক সভায় সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সন্তোষজনক না হলে চুক্তি বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গত সভায়। সে মোতাবেক একটি টিম সরেজমিন পরিদর্শন করে আসেন। টিম তার মতামতে বলেছে, সরেজমিন পরিদর্শনকালে প্রকল্পের কোন অগ্রগতি পরিলক্ষিত হয়নি।
নীলফামারী ৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের এলওআই ইস্যু করা হয় ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি। প্রকল্পটির কোনই অগ্রগতি নেই। স্পন্সর কোম্পানি গত ৩০ মার্চ তারিখে কাজটি বাতিল করার জন্য আবেদন করেছেন। একইসঙ্গে তাদের জমাকৃত ব্যাংক গ্যারান্টি ফেরত চেয়ে আবেদন দিয়েছে। প্রকল্পটির ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদ ছিল ২৮ মে পর্যন্ত, এরপর গ্যারান্টির মেয়াদ বৃদ্ধি না করায় নগদায়ন করা হয়েছে বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে।
পাবনা ৭০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের এলওআই ইস্যু করা হয় ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি। কোরিয়ান কোম্পানির ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নিরাপত্তা জামানত জমা দেওয়ার জন্য ৫ দফায় চিঠি দিলেও কোন সাড়া মেলেনি। অন্যদিকে চাঁদপুর ৭ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের এলওআই ইস্যু করা হয় ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। প্রকল্পটির কোন অগ্রগতি না থাকায় গত ২১ ডিসেম্বর এলওআই বাতিল করা হয়। এরপর ৯০ দিনের মধ্যে নিরাপত্তা জামানত ও জমির কাগজ জমাদানের শর্তে এলওআই বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়। সেই ৯০ দিন অতিবাহিত হবে আগামী ২৬ জুনে, এখন পর্যন্ত কোম্পানিটি নিরাপত্তা জামানত প্রদান ও জমির কাগজ জমা দেয়নি।
সুনামগঞ্জ (ধর্মপাশা) ৩২ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রকল্পটির এলওআই ইস্যু করা হয় ২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর। পিপিএ স্বাক্ষর করা হয় ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময় অনেক আগেই গত হয়েছে। জরিমানা কর্তনের শর্তে ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বাস্তব অগ্রগতি সামান্যই হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সন্তোষজনক না হলে চুক্তি বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গত সভায়।
২০১৬ সালে লালমনিরহাট (পাটগ্রাম) ৫ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য এলওআই ইস্যু করা হয়। এই প্রকল্পটির অগ্রগতিও সন্তোষজনক নয়। যে কারণে পূর্ববর্তী সভায় সরেজমিন পরিদর্শন করে চুক্তি বাতিলের বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
জামালপুর জেলার ২২টি সরকারি ভবনে ৮২৩৭ বর্গমিটার ভবনের ছাদে ৮৫২ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুতের জন্য এলওআই ইস্যু করা হয় ২০১৯ সালের ১১ মার্চ। দেশীয় কোম্পানি রহিম আফরোজ নবায়নযোগ্য জ্বালানি লিমিটেড প্রকল্পটি স্পন্সর প্রতিষ্ঠান। ভবন বরাদ্দের দীর্ঘসূত্রিতার ও জটিলতার কথা বলে চুক্তি বাতিল করে নিরাপত্তা জামানত ফেরত চেয়েছে।
বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা গেছে বেসরকারি খাতের ২৪টি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পের মধ্যে খুব কম সংখ্যকেই যথাযথভাবে এগিয়েছে। দীর্ঘদিন সময় অতিবাহিত হলেও সন্তোষজনক অগ্রগতি নেই। কোন কোন কোম্পানি এলওআই নিয়ে বসে রয়েছে পিপিএ স্বাক্ষর কিংব আইএ স্বাক্ষরের কোন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এমনকি দফায় দফায় চিঠি দিলেও অনেকেই নিরাপত্তা জামানত জমা দিচ্ছে না।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, অনেকে এলওআই নিয়ে অন্যদের কাছে বিক্রির জন্য দেনদরবার করছে। আবার কোন কোন কোম্পানি লাইসেন্স দেখিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অন্যখাতে বিনিয়োগ করছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে তাদের খুব একটা আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।