সঞ্চালন লাইন না থাকায় ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনা সম্ভাব হয়নি। এ অবস্থায় সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসে (সিএনজি) রূপান্তর করে তা আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
আগামী মাসে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে থেকে তিতাসের বিতরণ এলাকার শিল্প-কারখানায় এই গ্যাস সরবরাহ করবে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং লিমিটেড।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্ট্রাকো কম্পানি ভোলার গ্যাস সিএনজি করে আনতে চলতি বছরের মে মাসে সুন্দরবন গ্যাস কম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে।
জ্বালানি খাত বলছেন, সঞ্চালন লাইন না থাকায় ভোলা থেকে উত্তোলন করা গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে পরিবহন করে শিল্প-কারখানায় সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হলে এটি হবে দেশে প্রথমবারের মতো কোনো গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরাসরি সিএনজি করে গ্যাস নিয়ে যাওয়া।
সিএনজি আকারে এই গ্যাস এনে শিল্পে দেওয়া গেলে তা শিল্প খাতে বড় ভূমিকা রাখবে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন,ভোলায় প্রতিদিন প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব। তবে সঞ্চালন লাইন না থাকায় তা জাতীয় গ্রিডে আনা যাচ্ছে না। তাই বিকল্প উপায়ে গ্যাস শিল্পে দেওয়া হবে।
চুক্তি সূত্রে জানা গেছে, ইন্ট্রাকো সরকারের কাছ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ১৭ টাকায় কিনে তা ৪৭ টাকা ৬০ পয়সায় বিক্রি করবে। প্রথম ধাপে চার-পাঁচ মাসের মধ্যে দৈনিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস রূপান্তর করে তা ঢাকায় সরবরাহ করা হবে।
দ্বিতীয় ধাপে দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ১ বছরের মধ্যে সরবরাহ করা হবে। সংকুচিত করার ফলে গ্যাসকে চাপের মাধ্যমে তরলে পরিণত করে জমা করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় গ্যাসকে তরলীকরণ করে তা পরিবহন করা হবে।
বরিশাল নাগরিক আন্দোলনের জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মণিষা চক্রবর্তী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির ওয়াদার বরখেলাপ করে ২০২৩ সালের ২১ মে ইন্ট্রাকো কোম্পানির সাথে সরকারের ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি করা হয়। যার মাধ্যমে ভোলার গ্যাস সিএনজি করে ঢাকার বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ভোলার গ্যাস উদ্বৃত থাকার কথা বলে এই চুক্তি করা হয়েছে। অথচ ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের শিল্পখাতে এখন পর্যন্ত গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়নি। যে কারণে বরিশালে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা না করে ঢাকার শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের এ চুক্তি দক্ষিণাঞ্চলের জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে ।
ডা. মণিষা চক্রবর্তী বলেন, অবিলম্বে ইন্ট্রাকোর সাথে চুক্তি বাতিল করে ভোলার গ্যাস অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সকল জেলার কলকারখানা ও আবাসিকখাতে সরবরাহের দাবী জানাই।
ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং লিমিটেডের কম্পানি সচিব সালাউদ্দিন বলেন, সেপ্টেম্বরকে টার্গেট রেখেই দিন-রাতে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়েই ভোলার গ্যাস সিএনজি করে নিয়ে সরবরাহ করা যাবে।
ভোলায় গ্যাস উৎপাদনের কাজটি করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কম্পানি (বাপেক্স)। বাপেক্সের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ভোক্তা পর্যায়ে তা সরবরাহ করে সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। ১৯৯৫ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে বাপেক্স।
একই সংস্থা ২০১৮ সালে আবিষ্কার করে ভোলার দ্বিতীয় গ্যাসক্ষেত্র ভোলা নর্থ। শাহবাজপুর থেকে গ্যাস উৎপাদন শুরু হয় ২০০৯ সালে। আর ভোলা নর্থ থেকে এখনো উৎপাদন শুরু হয়নি। দুটি গ্যাসক্ষেত্রে এখন দেড় ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাসের মজুদ রয়েছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন,ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে নিয়ে আসতে এবং শিল্প এলাকায় সরবরাহ করতে অত্যধিক খরচ হবে, সেটি নিয়ে চ্যালেঞ্জ আছে।
তিনি বলেন,ইন্ট্রাকো কম্পানি ভোলার গ্যাস সিএনজি করে আনতে কাজ করছে। আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই ভোলার গ্যাস সিএনজি করে আনার জন্য সকল কাজ চলমান রয়েছে।