ওরিয়নের ব্যর্থতায় বেকায়দায় সরকার, বাজেয়াপ্ত হচ্ছে জামানত

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-24 04:18:59

বারবার সময় নিয়েও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যর্থ বিএনপি ঘরানার কোম্পানি ওরিয়ন গ্রুপ। আর তাদের ব্যর্থতার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে বেকায়দায় পড়তে হয়েছে সরকারকে। তাই ওরিয়ন গ্রুপকে আর সময় না দিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জামানত বাবদ প্রায় ৪৪ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। পাশাপাশি কোম্পানিটিকে কালো তালিকাভুক্ত করারও উদ্যোগ নিচ্ছে সংস্থাটি।

সরকারের মাস্টারপ্লান অনুযায়ী, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে জাতীয় গ্রিডে নতুন বিদ্যুৎ যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। সেভাবেই হিসাব করে ওরিয়ন গ্রুপের সাথে চুক্তি করে সরকার। কিন্তু উৎপাদনে যেতে না পারায় সরকারকেও বাধ্য হয়ে বহুল সমালোচিত রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন করতে হয়।

সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পিডিবি’র এক সভায় ওরিয়ন গ্রুপকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কোনোভাবেই আর সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই। ফলে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কোম্পানিটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে। চুক্তি বাতিল হলে প্রথম ধাপের তিনটি কেন্দ্রের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬ ডলার এবং এলওআই ইস্যুকৃত তিনটি কেন্দ্রের জন্য ১১ হাজার ৯৯০ ডলার বা প্রায় ৪৪ লাখ টাকা জামানত বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেলের চেয়ে সাশ্রয়ী কয়লা। তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিটে খরচ হয় ১৫ টাকা। আর কয়লায় খরচ পড়ে ৫-৭ টাকা। ফলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর জোর দেয় সরকার। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা হবে ৪০ হাজার মেগাওয়াট। যার ২০ হাজার মেগাওয়াট কয়লা দিয়ে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। এই সুযোগে ২০১২ সালে প্রথম দেশীয় কোম্পানি ওরিয়ন গ্রুপ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সরকারে সঙ্গে চুক্তি করে।

আরো জানা গেছে, প্রথম ধাপে ওরিয়ন গ্রুপের মাওয়ায় ৫২২, খুলনায় ২৮২ ও চট্টগ্রামে ২৮২ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করার কথা। তাদের পার্টনার হিসেবে থাকার কথা চাইনিজ কোম্পানি লনকিং’কে। এগুলোর মধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০১৬ সালের মার্চে এবং মাওয়া কেন্দ্রটি একই বছরের জুলাই মাসে উৎপাদনে যাওয়ার কথা। কিন্তু উৎপাদন তো দূরের কথা প্রায় সাড়ে ৬ বছরে কেন্দ্রের কাজই শুরু করতে পারেনি ওরিয়ন গ্রুপ।

অন্যদিকে, ২০১৩ সালে দ্বিতীয় দফায় ঢাকায় ২৮২ ও ৬৩৫ এবং চট্টগ্রামে ২৮২ মেওগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে এলওআই (আগ্রহপত্র) ইস্যু করে কোম্পানিটি। সেগুলোর অগ্রগতিও জিরো। দফায় দফায় শুধু সময় বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে পারেনি ওরিয়ন গ্রুপ।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ অক্টোবর বিদ্যুৎ বিভাগের এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় ওরিয়ন গ্রুপ কর্তৃপক্ষকে ভৎসনা করা হয় এবং গত অক্টোবর মাসের পর আর সময় না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এক গণশুনানিতে তৎকালীন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান জানিয়েছিলেন, তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেশি। ফলে আপাতত বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। তবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে বিদ্যুতের দাম কমানো হবে।

কিন্তু ওরিয়ন গ্রুপের ব্যর্থতার কারণে বিদ্যুতের দাম কমানো সম্ভব হয়নি। বরং দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হয়েছে সরকারকে।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই বিব্রতকর অবস্থায় আছি।’

এতোদিনে ওরিয়নের সাথে কেন চুক্তি বাতিল করা হয়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘চুক্তি বাতিল করা আমাদের লক্ষ্য না। আমরা কাজটি করাতে চাই। আর চুক্তি বাতিল করলে অন্য কাউকে সেটার দায়িত্ব দিতেই হতো। তাই এতোদিন অপেক্ষা করা হয়েছে। তাদের দ্রুত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ব্যর্থ হলে চুক্তি বাতিল করা হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর