অক্টোবরে আনুষ্ঠানিক এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) উদ্বোধন প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করতে পারেন বলে জানিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নুরুল আলম।
জ্বালানি খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত ৩ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে তেল খালাসের সময় জাহাজে সংযোগকারী পাইপলাইনে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটে। এতে কিছু মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রকল্পটি চালু করার জন্য কিছু মালামাল আনতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী চীনা প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই এসব মালামাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে কমিশনিংয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক উদ্বোধনের বিষয়েও প্রস্তুতি চলছে।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে নির্মাণাধীন ‘ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্প। মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিমে (বঙ্গোপসাগরে) একটি ভাসমান জেটি স্থাপন করা হয়েছে। জেটি থেকে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় পাম্প স্টেশন ও ট্যাংক ফার্ম (পিএসটিএফ) হয়ে চট্টগ্রাম জেলার উত্তর পতেঙ্গাস্থ ইস্টার্ণ রিফাইনারী লিমিটেড পর্যন্ত ১১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দু’টি সমান্তরাল পাইপলাইন স্থাপন শেষ হয়েছে। এছাড়া মহেশখালী উপজেলার পাম্প স্টেশন ও ট্যাংক ফার্ম (পিএসটিএফ) এলাকায় ৩টি ক্রুড অয়েল ও ৩টি পরিশোধিত তেলের ট্যাংক, স্কাডা সিস্টেমস, প্রধান পাম্প, বুস্টার পাম্প, জেনারেটর, মিটারিং স্টেশন, পিগিং স্টেশন, অফিস ও আবাসিক ভবন, অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা ও প্রয়োজনীয় সকল অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জ্বালানি তেল ব্যবস্থাপনা সাশ্রয়ী ও টেকসই করতে এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) কার্যকরী অবদান রাখবে। পানির নিচ দিয়ে পাইপলাইন করা হয়েছে। এতদিন বড় জাহাজে আমদানি করা জ্বালানি তেল লাইটার জাহাজে করে রিফাইনারি ট্যাংকে পৌঁছাতে সময় লাগত লাগত ১১-১২ দিন। এসপিএম চালু হলে সমপরিমাণ তেল পরিবহণে সময় লাগবে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। এতে বছরে সাশ্রয় হবে কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা, কমে যাবে সিস্টেম লস। পাইপলাইনে পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ৬টি বিশালাকার স্টোরেজ ট্যাঙ্ক; যা বাংলাদেশের তেল মজুদ সক্ষমতাকে নিয়ে যাবে নতুন উচ্চতায়। এসপিএম বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী মেগাপ্রকল্প।
বাংলাদেশে জ্বালানি তেল উৎপাদন করে না, গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে প্রাপ্ত কনডেনসেট থেকে পেট্রোল ও অকটেন ৪০ শতাংশের মতো যোগান আসে। বিপুল পরিমাণ ডিজেলসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি করে যোগান দেওয়া হয়। সম্প্রতি ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে কিছু তেল আমদানি করা হচ্ছে। এতোদিন জ্বালানি তেলের প্রায় সবটাই নদী পথে আমদানি করা হতো। কিন্তু নদীবন্দরের নাব্যতার অভাবে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। গভীর সমুদ্রে নোঙর করে জ্বালানি তেলবাহী বড় জাহাজ। সেখান থেকে লাইটার বা ছোট জাহাজে তেল আনা হয় বিপিসির ডিপোতে। বিপিসি থেকে আবার জাহাজে করে তেল দেশের বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেয়।
বড় জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে অন্তত ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগে। কখনও এই তেল খালাস করতে আরও বেশি সময় লেগে যায়। বিশেষ করে সমুদ্র উত্তাল হয়ে পড়লে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তেল খালাস। জাহাজ মালিকদের সঙ্গে চুক্তির চেয়ে বেশি সময় লাগায় অনেক সময় জরিমানা গুণতে হয়। এসপিএম প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ২৮ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় ডিজেল ও ক্রড অয়েল খালাস করা সম্ভব হবে। এতে একদিকে যেমন জাহাজ ভাড়া কমে আসবে, অন্যদিকে তেল পরিবহনে সিস্টেম লস ও নানা ধরনের চুরিও প্রতিরোধ হবে।
এসপিএম চালু হলে বিদেশ থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী এলাকায় স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকে জমা হবে। সেখান থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ডিপো, ইস্টার্ন রিফাইনারির স্টোরেজ ট্যাংক ছাড়াও প্রয়োজনে তেল বিপণন কোম্পানির বিভিন্ন স্টোরেজ ট্যাংকে জমা করা যাবে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে শুরু হয় এসপিএম প্রকল্পের কাজ।