টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলা নিয়ে গঠিত গ্যাস ব্লক-৮ এবং সুনামগঞ্জ, শেরপুর ও ময়মনসিংহ এলাকা নিয়ে গঠিত ১১ নম্বর ব্লক শেভরনকে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে নিজ অফিস কক্ষে বার্তা২৪.কম এর সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রতিমন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোন ফর্মুলায় চুক্তি হবে সে বিষয়টি এখনও চুড়ান্ত হয় নি। তাদের সঙ্গে আগের সম্পাদিত চুক্তি সম্প্রসারণ করা হবে নাকি নতুন পিএসসি (উৎপাদন বন্টন চুক্তি) হবে। শেভরনকে পুর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা জমা দিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবনা পেলে ফর্মুলার বিষয়ে চূড়ান্ত হবে।
গত বছরের মাঝামাঝি বিষয়টি আলোচনা এলেও ডিসেম্বরে লিখিত আবেদন দেয় শেভরন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এরিক এম ওয়াকার। কোম্পানিটি বিশেষ বিধান আইনের আওতায় ব্লক-৮, ব্লক-১১ এবং রশীদপুর গ্যাস ফিল্ড উন্নয়ন প্রস্তাব জমা দিয়েছিল। তবে রশীদপুর গ্যাস ফিল্ড দেওয়া হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেছেন নসরুল হামিদ।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স ব্লক-৮ এ দ্বিমাত্রিক জরিপ এবং ১১ নম্বর ব্লকের একটি অংশে ত্রিমাত্রিক জরিপ করেছে বাপেক্স। সম্ভাবনাময় ১১ নম্বর ব্লকে ২ দশমিক ৪৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।শেভরন বাংলাদেশ এসব ব্লকে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপ করবে। জরিপের ফলাফল ইতিবাচক হলে পরবর্তী ধাপে (কূপ খনন) যাবে কোম্পানিটি।
বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ মোট ৩টি ব্লক থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে। তাদের হাতে রয়েছে ব্লক-১২ নম্বরে থাকা বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র, ব্লক-১৩ নম্বরে থাকা জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র এবং ব্লক-১৪ নম্বরে থাকা মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র। এর মধ্যে বিবিয়ানা দেশের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র। গত ২৪ সেপ্টেম্বর গ্যাস উত্তোলনের হিসাব অনুযায়ী ১০৮০ দশমিক ১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করেছে গ্যাসক্ষেত্রটি থেকে। ওই দিন শেভরন বাংলাদেশের মালিকানাধীন ৩টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে মোট ১২৮০ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত গ্যাসের ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ।
এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবরে শেভরনের বিবিয়ানা ফিল্ডের নতুন এলাকায় কূপ খনন করতে ত্রিপক্ষীয় সম্পূরক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পেট্রোবাংলা ও শেভরন বাংলাদেশ। এই চুক্তির আওতায় শেভরনের বিবিয়ানা ফিল্ডের নতুন এলাকায় ২৭নং কূপ খননের কাজ শুরু করা হয়েছে। এই কূপে সফলতা পেলে নতুন আরও একটি কূপ খনন করতে চায় কোম্পানিটি।
প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আমরা বিবিয়ানার সম্প্রসারিত এলাকায় ভালো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শেভরন সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিশেষ আইনে চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা তাদের বলেছি মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে রিপোর্ট পাওয়ার আগে কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাই না।মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের রিপোর্ট পেতে আরও এক-দুই মাস সময় লাগবে। মডেল পিএসসি আকর্ষণীয় করার কারণে অনেক বড় বড় বিদেশি কোম্পানি সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। মার্কিন কোম্পানি এক্সন মবিল খুবই আগ্রহ দেখাচ্ছে। তারা ইতোমধ্যে দুই দফায় প্রস্তাবনা দিয়েছে।
২০০৮ সালের গভীর সমুদ্রের ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ নম্বর ব্লক ইজারা পেয়েছিল আমেরিকান কোম্পানি কনোকো ফিলিপস। কোম্পানিটি দুই বছর অনুসন্ধান করার পর চুক্তি সংশোধন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির দাবি জানায়। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় ব্লক দুটি ছেড়ে দিয়ে চলে যায় ২০১৪ সালে। অন্যদিকে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক দরপত্রে গভীর সমুদ্রের ডিএস-১২, ডিএস-১৬ ও ডিএস-২১ এই তিন ব্লকের জন্য যৌথভাবে দরপ্রস্তাব জমা দিয়েছিল কনোকো ফিলিপস ও স্টেট অয়েল। পরবর্তী সময়ে কনোকো নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় ব্লকগুলো ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। একই সময়ে অগভীর সমুদ্র্রের ব্লকগুলোর জন্য ভিন্ন একটি দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। এই দর প্রক্রিয়া এসএস ১১ নম্বর ব্লক সান্তোস ও ক্রিস এনার্জি এবং এসএস ৪ ও এসএস ৯ নম্বর ব্লক ভারতীয় দুটি কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ (ওভিএল) ও অয়েল ইন্ডিয়া (ওআইএল) ইজারা নিয়েছিল। সান্তোস এসএস-১১ ব্লকে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপ করার পর কূপ খনন না করেই বাংলাদেশ থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। ওএনজিসি দুই ব্লকে থ্রি-ডি ও টু-ডি সাইসমিক জরিপ চালানোর পর ৪ নম্বর ব্লকে একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করে, কিন্তু গ্যাস মেলেনি। তারা আরও দুটি কূপ খনন করবে বলে জানা গেছে।