১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে নানান পকেট সৃষ্টি হচ্ছে, বলছেন নানা সমস্যার কথা। তবে স্মার্ট গ্রিড এসব সমস্যার সমাধান দেবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে আয়োজিত স্মার্ট গ্রিড অভিজ্ঞতা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎখাতের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি এসব কথা বলেন।
এ অনুষ্ঠানে স্মার্ট গ্রিড নির্মাতা বিভিন্ন দেশের কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন। বাংলাদেশ স্মার্ট গ্রিড রোডম্যাপ দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এতে অর্থায়ন করবে ইউএস ট্রেড এন্ড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সী। স্মার্ট গ্রিডের ওই প্রকল্পে সঞ্চালন কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ এবং বিতরণ কোম্পানি হয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুতের নানা রকম সমস্যা হয়, আমরা সেগুলো ট্রাডিশনাল ওয়েতে সমাধান করি। কিন্তু উন্নত বিশ্ব ট্রাডিশনাল ওয়েতে করে না। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, পিজিসিবির ট্রান্সফরমারে আগুন লাগলো, আমি জানতে চাইলাম কবে মেরামত করা হয়েছে। এমডি জানালেন স্যার দেখতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানালেন অনেক আগে লাইফ শেষ হয়েছে। পরিবর্তন না করার কারণ জানালেন খেয়াল করা হয়নি। বিদ্যুৎ খাত বড় হচ্ছে এইভাবে চললে হবে না। যতো বড় হচ্ছে, তাতে সমস্যা বাড়বে, সিস্টেমকে সমন্বিত করা, এটাই হচ্ছে স্মার্ট গ্রিড।
তিনি বলেন, টেকনাফে ৫ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের কাজ চলছে। তিন-চার বছরের মধ্যে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে, পিজিসিবি কি প্রস্তুত, আমার মনে হয় পিজিসিবি জানেই না। মিটার এখন কথা বলবে, কাস্টমার কি আচরণ করছে, কোন এলাকায় কখন বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় এসব তথ্য দেবে স্মার্ট গ্রিড। বিদ্যুৎ খাতকে নিরাপদ করবে স্মার্ট গ্রিড। বৈদ্যুতিক যানবাহন আসবে, তারা বিভিন্ন জায়গা চার্জ দেবে, আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে।
আমাদের বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্নভাবে স্মার্ট গ্রিডের প্রকল্প নিচ্ছে। আমরা চাই সমন্বিত স্মার্ট গ্রিড, এক সংস্থার সঙ্গে অন্য সংস্থার নিবিড় যোগাযোগ থাকবে। যে কারণে এই আয়োজন, একটি তথ্য সেন্টার হিসেবে কাজ করবে। রিয়েল টাইম তথ্য থাকতে হবে, সময়ের আগের প্রস্তুতি নিতে হবে। পরমাণু বিদ্যুৎ আসতেছে তার জন্য প্রস্তুত হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা কোভিডে বিরাট সমস্যায় পড়লাম এরপর এলো ইউক্রেন সংকট। সেইটা ধাক্কা না যেতেই এবার মধ্যপ্রাচ্য সংকটের শুরু। এসব সংকটের জন্য আমাদের আগাম প্রস্তুতি থাকা দরকার।
বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, স্মার্ট গ্রিডের বিষয়টি কোন বিলাসিতার বিষয় নয়। নিরবিচ্ছিন্ন ও কোয়ালিটি বিদ্যুতের জন্য স্মার্ট গ্রিড জরুরি। স্মার্ট গ্রিড অনেক সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। বাস্তবায়ন করতে সকল প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা জরুরি। বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা ছাড়া এটি বাস্তবায়ন সম্ভব না।
পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট গ্রিড জরুরি। আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই যাত্রার শুভ সুচনা হচ্ছে।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম গাউস মহিউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান। ভার্চুয়াল যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন ইউএস ট্রেড এন্ড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সীর সিনিয়র রিজওনাল রিপ্রেজেনটেটিভ (সাউথ এশিয়া) মেহনাজ আনসারী।
আরও উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাৎ সেলিম উদ্দিন, ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমীর আলী, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিন, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম প্রমুখ।