প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদন স্থগিত হওয়া এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের চেয়াম্যানসহ ৭ জনকে তিন কোটি ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মিথ্যা তথ্য প্রদান করে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করায় এ জরিমানা করা হয়েছে।
সম্প্রতি বিএসইসির কমিশনার ড. রুমানা ইসলামের সই করা পৃথক ৭টি আদেশের মাধ্যমে এ জরিমানা করা হয়। রোববার (১২ নভেম্বর) জরিমানার বিষয়টি বার্তা টোয়েন্টিফোরকে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
সূত্র জানায়, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের চেয়ারম্যান তাহমিনা বেগমকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনির আহমেদকে ৭৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিন পরিচালক মাকসুদ আহমেদ, সেলিনা আহমেদ এবং সাদিয়া আহমেদকেও জরিমানা করা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা করে। এছাড়াও কোম্পানি সচিব ইশতিয়াক হোসেন ও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) জয়ন্ত কুমার বিশ্বাসকেও ২৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে বিএসইসি।
জানা গেছে, বুক-বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে গত বছরের ৩১ আগস্ট এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের আইপিওর অনুমোদন দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। শেয়ারবাজার থেকে কোম্পানিটি সর্বমোট ৯৫ লাখ টাকা উত্তোলন করার কথা ছিল। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত কোম্পানিটির কাট-অফ-প্রাইস নির্ধারণে নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের কাট-অফ প্রাইস থেকে ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্টে অথবা ২০ টাকা, দুটির মধ্যে যেটি কম সে মূল্যে আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার ইস্যুর কথা ছিল।
সূত্র জানায়, আইপিও অনুমোদনের পর এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে। শেয়ারবাজার থেকে প্রায় শতকোটি টাকা উত্তোলন করতে কোম্পানিটি তাদের সম্পদের মূল্য ১৪ গুণ বেশি উল্লেখ করে আইপিও পূর্ববর্তী প্রসপেক্টাসে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদনের একাধিক তথ্যেও ব্যাপক অসামঞ্জস্যতা ধরা পড়ে। এর প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের আইপিও স্থগিত করে বিএসইসি।
বিএসইসির আদেশে উল্লেখ করা হয়, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) সংক্রান্ত অনুমোদন পত্রের শর্ত অনুযায়ী কমিশনে জমির দলিল সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য প্রদান করার ফলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করেছে এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। কোম্পানিটির এ ধরণের কর্মকান্ডে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২এফ এবং ১৮ লঙ্ঘন হয়েছে। এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের প্রতিনিধিত্বকারী সকল পরিচালক সিকিউরিটিজ আইন ও এর অধীনে জারিকৃত বিধি-বিধান পরিপালনে ব্যর্থতার জন্য দায়ী এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ২২ নং ধারা অনুযায়ী এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এশিয়াটিকের পরিচালক, প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) ও কোম্পানী সচিবকে শাস্তি প্রদান করা প্রয়োজন মনে করায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ২২ নং ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জরিমানা করা হয়েছে বলে পৃথক এসব আদেশে উল্লেখ করা হয়। আদেশের ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে এ জরিমানার অর্থ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বার্তা টোয়েন্টিফোরকে বলেন, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের আইপিও অনুমোদনের পর গণমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তদন্ত করে বিএসইসি। এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজের প্রতিনিধিদের শোকজ এবং শুনানির পরই কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এখন পর্যন্ত কোম্পানিটির আইপিও স্থগিতই আছে, তাদের আইপিও নিয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।