শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের বিরুদ্ধে লভ্যাংশ নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। ২০২২ সালের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশ এখনও পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক হিসাবে প্রেরণ করেনি কোম্পানিটি।
রোববার (১৯ নভেম্বর) পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান বরাবর কোম্পানিটির একজন শেয়ারহোল্ডার এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, ২০২২ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে জ্বালানি খাতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান লুব-রেফ বাংলাদেশ। গত বছরের (২০২২ সাল) ২৭ ডিসেম্বর কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএমে) ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনও করা হয়।
বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যেই শেয়ারহোল্ডারদের ব্যাংক হিসাবে লভ্যাংশ প্রেরণের বাধ্যবাধকতা ছিল লুব-রেফের। তবে দীর্ঘ ৯ মাস অতিবাহিত হলেও অনেক শেয়ারহোল্ডার এখনো কোম্পানিটির লভ্যাংশ পাননি। এক্ষেত্রে লুব-রেফ বিএসইসির নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
লুব-রেফের লভ্যাংশ না পেয়ে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মোহাম্মদ শেখ-উল-ইসলাম নামে কোম্পানিটির একজন শেয়ারহোল্ডার। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, লুব-রেফ ২০২২ সালের জন্য যে ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে, তা কিছু বিনিয়োগকারী পেয়েছে। আবার অনেকেই লভ্যাংশ এখনো পায়নি। ব্যাংক স্টেটমেন্ট চেক করে দেখি লুব-রেফ আমার অ্যাকাউন্টেও লভ্যাংশ পাঠায়নি। বিষয়টি নিয়ে কোম্পানি সচিবকে অনেকবার কল দিয়েছি, কিন্তু তিনি আমার ফোন রিসিভ করেননি। পরে তাদের ঢাকা অফিসে গিয়ে আমি যোগাযোগ করি। সেখান থেকে আমাকে কোম্পানি সচিবের অন্য একটি নম্বর দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, পরবর্তীতে অফিসে গেলে কোম্পানি সচিব আমার বিও হিসাবের ডিটেইলস চান। অক্টোবরের মধ্যে ডিভিডেন্ড আমার ব্যাংক হিসাবে দেওয়ার আশ্বাস দিলও পরবর্তীতে উনি আমার কল ধরেননি। যখন দেখলাম ২০২২ সালের ডিভিডেন্ড না দিয়েই তারা ২০২৩ সালের লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে তখন বাধ্য হয়েই বিএসইসিতে অভিযোগ করেছি।
মোহাম্মদ শেখ-উল-ইসলামের অভিযোগের বিষয়ে জানতে লুব-রেফের কোম্পানি সচিব মো. মশিউর রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। ফোন রিসিভ করে প্রথমে মশিউর রহমান পরিচয় নিশ্চিত করেন তিনি। তবে প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে নিজের নাম কবির দাবি করে তিনি বলেন, মশিউর রহমান ছুটিতে আছেন। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ বা ডিভিডেন্ডের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।
লভ্যাংশের ঘোষণা দিয়েও পরিশোধ না করা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, লুব-রেফ বাংলাদেশ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে কয়েক বছর আগেই। ভেবেছিলাম কোম্পানিটি ভালো কিছু করবে। লভ্যাংশ ঘোষণা দিয়ে পরিশোধ না করার অর্থ হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা। এ ধরণের কোম্পানিগুলোর কারণেই পুঁজিবাজারে আস্থার সংকট তৈরি হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, এজিএমে অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যেই কোম্পানিগুলোকে লভ্যাংশ পরিশোধ করতে হবে। লভ্যাংশ না পেয়ে কোন বিনিয়োগকারী যদি অভিযোগ করেন, কমিশন অবশ্যই অভিযোগ খতিয়ে দেখে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় বিএসইসি সবসময় কাজ করে যাচ্ছে।
এদিকে, ২০২২ সালের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীরা না পেলেও ২০২৩ সালের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে লুব-রেফ। এ বছর শেয়ারহোল্ডারদের নগদ ২ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। সর্বশেষ হিসাব বছরের (৩০ জুন, ২০২৩) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির আয়েও ভাটা পড়েছে। ২০২৩ সালে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৪১ পয়সা। আগের বছর ইপিএসের পরিমাণ ছিল ২ টাকা ১৩ পয়সা।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেড। সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের কাছে কোম্পানিটির ৫৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ধারণ করছেন ৩৫ দশমিক ৭০ শতাংশ শেয়ার। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন। বাকি দশমিক ০৬ শতাংশ শেয়ার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।