দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এমন প্রার্থীদের ব্যাংক ঋণের হালনাগাদ তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইন অনুযায়ী, কোনো ঋণ খেলাপি গ্রাহকের পক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণ সম্ভব নয়।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে। সার্কুলারটি দেশে কার্যরত সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২–এর ১২ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী কোনো ঋণখেলাপি ব্যক্তি জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়ার যোগ্য হন না। ফলে খেলাপি হলে কেউ প্রার্থী হতে পারেন না। আগে নিয়ম ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাতদিন আগে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল করে নিয়মিত করতে হবে। ব্যাংকঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত বিধান ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সংশোধন করা হয়। আর বিলখেলাপি–সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করা হয় চলতি বছরের জুলাইয়ে। নতুন আইনে মনোনয়নপত্র জমার এক দিন আগে খেলাপি ঋণ পরিশোধ করলেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া যায়।
নানা ধরনের ছাড় দেওয়ার কারণে ঋণ খেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া সহজ হয়ে গেছে। এখন আর ভোটে দাঁড়াতে আগের মতো ১০ শতাংশ নগদ অর্থ জমা দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিল করতে হচ্ছে না। এর চেয়ে অনেক কম অর্থ জমা দিলেই হয়। তাছাড়া আগের মতো ঋণ পুনঃতফসিলের প্রস্তাবও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানোর দরকার পড়ে না। ফলে ব্যাংকগুলো যে যার মতো করে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করে দিচ্ছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঋণ খেলাপিদের আরও ছাড় দিতে চেয়েছিল। ঋণ খেলাপিদের জন্য নির্বাচনের পথ সহজ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরো (সিআইবি) ছাড়পত্রের বাধ্যবাধকতা তুলে দিতে চেয়েছিল ইসি। তারা চেয়েছিল খেলাপি ঋণ আদায়ে কেবল মামলা থাকলেই নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। এ জন্য সিআইবির ছাড়পত্র লাগবে না। তাই গত বছরের জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে ইসি বৈঠক করে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর অসম্মতিতে নির্বাচন কমিশনের সেই চেষ্টা সফল হয়নি।
২০১৮ সালে ব্যাংকঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত বিধান, আর এ বছর বিলখেলাপি–সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করায় এমন সুযোগ তৈরি হয়েছে।
মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দুই বছরের বেশি সময় ঋণ পরিশোধে ছাড় দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ঋণ শোধ বা কিস্তি না দিলেও কেউ খেলাপি হননি। এরপর গত বছরের জুলাইয়ে খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিলের নীতিমালা সংশোধন করে ছাড় দেওয়া হয়। যার ফলে এখন ব্যাংক নিজেই খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে পারছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে এখন জমা দিতে হচ্ছে বকেয়ার আড়াই থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৬ শতাংশ অর্থ। আগে যা ছিল ১০ থেকে ৩০ শতাংশ।