পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের আবার ঋণ দেবে সরকার

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-14 19:03:35

পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মাঝে সারকার আবারও বিনা শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছানাউল হক।

 

সম্প্রতি পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একান্ত সাক্ষাতকালে বার্তা২৪.কম’কে তিনি এসব কথা বলেন। প্রসঙ্গত, ছানাউল হক ১৯৮৪ সালে আইসিবি’তেই কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) এমডি, অগ্রণী ব্যাংকের ডিএমডি, আইসিবি ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সাক্ষাৎকারের চম্বুক অংশ বার্তা২৪.কম’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন: ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার কী ধরণের সুবিধা দেওয়ার চিন্তা করছে?

উত্তর: সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সহায়তায় এর আগে ৯০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। যার শতভাগ ফেরত এসেছে। তাই সরকার আবারও এ ধরণের ঋণ দেওয়ার কথা ভাবছে। সম্প্রতি আমরা একটি মিটিংও করেছি, যেখানে সরকারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। আশা করছি উভয় পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এ ঋণ সুবিধা পাবেন।

প্রশ্ন: ভারত ও পাকিস্তানি মুদ্রার অবমূল্যায়ন হওয়ায় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এদেশের পুঁজিবাজার থেকে কী সুবিধা নিতে পারে?

উত্তর: বার্তমানে এক ডলারের দাম ১৩০ পাকিস্তানি রুপি। যেখানে আমাদের মুদ্রার মান ৮০-৮৩ টাকা। ফলে পাসিস্তানের মুদ্রার অবমূল্যায়ন হওয়ায় বাইরে টাকা পাচার হচ্ছে। আমি আশা করি, ভারত ও পাকিস্তানের মুদ্রার অবমূল্যায়নের সুযোগে বড় বড় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে আসবে।

প্রশ্ন: নির্বাচন শেষে পুঁজিবাজারের অবস্থা কেমন আশা করছেন?

উত্তর: নির্বাচন শেষে দেশের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি। তাছাড়া দেশের অনেক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। ফলে দেশে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে। ইতোমধ্যে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে জাপানি ও চীনের বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে। তবে দেশে রাজনৈতিক সংকট কেটে গেলে আমাদের পুঁজিাবাজারের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রশ্ন: আইসিবি পুঁজিবাজারে কিভাবে সাপোর্ট দেয়?

উত্তর: আইসিবি গত ২০ বছর ধরে পুঁজিবাজারে সাপোর্ট দিয়ে আসছে। ১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজার ধসের সময় যেমন সাপোর্ট দিয়েছিল, তেমনি ২০১১ সালের ধসেও আমরা বাজারকে সাপোর্ট দিয়েছি। বর্তমান ক্রাইসিসের মধ্যেও সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছি। তবে পুঁজিাবাজার থেকে আমরা মুনাফাও করছি। গত বছর ক্রাইসিসের মধ্যেও আমরা শেয়ার হোল্ডারদের ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ও ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছি।

প্রশ্ন: ফারমার্স ব্যাংকের সংকট কাটাতে আইসিবি কী ভূমিকা রাখছে?

উত্তর: গত বছর আমরা খুবই ক্রিটিক্যাল সময় পার করেছি। কারণ ফারমার্স ব্যাংক একেবারে বসে গিয়েছিল। আইসিবি ও অন্যান্য ব্যাংকগুলো ইক্যুইটি যোগান দিয়ে এই ব্যাংকটিকে আবার দাঁড় করিয়েছে। ফলে সেই অর্থে ব্যাংকটির আর ক্রাইসিস নেই। তবে ক্রাইসিস থাকলে তার একটা আন্তর্জাতিক প্রভাব পড়তো দেশে। এজন্য অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের পলিসি সাপোর্ট দিয়েছে। ফলে এখন আমানতকারীদের আস্থা ফিরেছে।

প্রশ্ন: আইসিবির ২০০০ কোটি টাকার বন্ড থেকে কী মুনাফা আসা শুরু করেছে?

উত্তর: দেখুন, বন্ড বিক্রি থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ টাকা পেয়েছি। বাকিটা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পাবো। সেটা দিয়ে উভয় পুঁজিবাজারে সাপোর্ট দিয়েছি। সংকটকালেও আমরা সাপোর্ট দিয়ে গেছি। সিঙ্গেল ব্রোয়ার এক্সপোজরদের জন্য আমরা বন্ডটাকে নিয়ে এসেছিলাম। ফলে পুঁজিবাজার আবার চাঙ্গা হয়ে গেল। এসময় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে। ফলে বন্ডটার সাবসক্রিপশন সহজ হয়েছিল। এই বন্ডের কারণেই নভেম্বর-ডিসেম্বরে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে এবং মাকের্টের সাপোর্ট লেভেল ধরে রাখতে সহায়তা করেছে। ২০১৯ সাল পুঁজিবাজার ভালো থাকবে বলে আশা করছি। কারণ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। ফলে পুঁজিবাজারের ইন্ডিকেটরগুলো ভালো দিকে যাবে।

তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন কারণে আমাদের পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও এখন তারা আবার ফিরতে শুরু করেছে। এশিয়ার দেশগুলো থেকে তারা পুঁজি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সরকার বন্ডের সুদ হার কমিয়ে দেওয়ায় তারা আবার ফিরতে শুরু করেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর