বিদ্যুৎ-জ্বালানি এখন প্রধান বিষয় হয়ে গেছে অন্ন বস্ত্রের মতো। দিন শেষে সর্বপ্রথম হচ্ছে জনগণের চাওয়া বলে মন্তব্য করেছেন তানভীর শাকিল জয় (এমপি)।
বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ব্র্যাক সেন্টার ইন অডিটরিয়ামে সিপিডি ডায়লগে তিনি এমন মন্তব্য করেন। জ্বালানি রূপান্তরে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা, রাজনৈতিকদলের নির্বাচনী ইশতেহার শীর্ষক ডায়লগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্চ ডিরেক্টর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
প্রধান অতিথি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন বিদ্যুৎ নিয়ে অনেকটা যুদ্ধাবস্থার মতো ছিল। নির্বাচনী এলাকায় গেলেই হাজার হাজার মানুষ ভিড় করতো বিদ্যুতের দাবিতে। এখন একজনও আর আসে না। কিছু ভুল থাকতে পারে, তখন এটি দরকার ছিল কারণ জনগণ চায় বিদ্যুৎ।
খাস জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প করা প্রসঙ্গে এক বক্তার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই খাস জমি ব্যবহার করে সৌরবিদ্যুৎ করা যাবে না। খাস জমিও কিন্তু পতিত না। সেখানে কৃষকরা চাষাবাদ করে। সবার আগে কৃষককে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের উন্নয়ন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, অনেক সময় আলোচনা এমন হয় যেনো সরকার কিছুই করছে না। অফগ্রিডের সৌর বিদ্যুৎ যোগ করলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির পরিমাণ ৫ শতাংশ হয়। কয়লা বলেন, সৌরবিদ্যুৎ বলেন সব জায়গায় সংকট জমি। বেসরকারি খাতে ৩ হাজার মেগাওয়াটের এলওআই ইস্যু করা হয়েছে। দেখা যাবে ১ হাজারও আসতে পারছে না। আর সরকারি খাতে যা দিচ্ছি সবটাই হবে।
দায়মুক্তি আইনের সমালোচনা প্রসঙ্গে তানভীর শাকিল জয় বলেন, আমরা কিন্তু দর কষাকষি করে চূড়ান্ত করছি। এক সময় ১৮-১৯ সেন্টস পর্যন্ত দর দেওয়া হয়েছে। এখন ৯.৮৫ সেন্টসের নিচে দেওয়া হচ্ছে। আবার নতুন চুক্তি করতে গেলে বলা হচ্ছে আরও কমাতে হবে। তাই বিশেষ আইন নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, এনার্জি ট্রানজিশন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে কাজ করেছি। জ্বালানি সবসময় রাজনৈতিক ইস্যু এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকারি দল খুবই গুরুত্ব দিয়েছে নির্বাচনী ইশতেহারে। তারা ২০৩০ সালে ৪০ গিগাওয়াট, ২০৪১ সালে ৬০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলেছে। আওয়ামী লীগ তাদের আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে গেছে। এখন কয়লা উত্তোলনের কথা বলছে যা তাদের আগের অবস্থার সঙ্গে মেলে না। আমরা ভয় পাচ্ছি জ্বালানি রূপান্তর নীতি আবার কয়লা রূপান্তর নীতি না হয়ে যায়।
সরকার তার ইশতেহারে ২০৪০ সালে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুতের কথা বলা হচ্ছে। তবে সমন্বিত বিদ্যুৎ জ্বালানি মাস্টারপ্ল্যানে বলা হয়েছে হবে ৮.৮ শতাংশ। হাইড্রোজেনকে ক্লিন এনার্জির নাম দিয়ে করা হবে তা সঠিক নয়। এ ধরনের উদ্যোগ জ্বালানি রূপান্তর নীতিকে ব্যাহত করবে। সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ দিন দিন কমে আসছে সেদিকে মনযোগ বাড়ানো উচিত। তবে বাস্তবতা হচ্ছে যেভাবে বলা হচ্ছে সেভাবে অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
প্যানেল আলোচক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ম তামিম বলেন, জ্বালানি রূপান্তরের বিষয়টি অনেক ভেবে করতে হবে। আমাদের পরিবেশ ও বাংলাদেশের বাস্তবতা বিবেচনায় নিতে হবে। অন্য দেশের সঙ্গে মেলাতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে চীন ও ভারত। আবার তাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনও অনেক বেশি। জনগণ চায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ তারা এতো কিছু বুঝতে চায় না। এ কারণে সরকার চাপ অনুভব করে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতের দায়মুক্তির বিশেষ বিধান আইনের সমালোচনা করে ম. তামিম বলেন, ২০১২ সালের বাস্তবতায় আইনটির প্রয়োজন ছিল। আমি তখন সমর্থন করেছিলাম। কিন্তু এখনকার বাস্তবতায় এটার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। দেশে দেশে সরকারগুলোর মনোভাব হচ্ছে নিজের আইন নিজে ভাঙা। শক্তিশালী রেগুলেটরি বডি দরকার। তা না হলে সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার ব্যালান্স কে করবে।
সিপিডিরি নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা হোসেনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মকবুল ই এলাহী চৌধুরী, ড. বদরুল ইমাম, একশন এইডের এনার্জি ট্রানজিশন বিভাগের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।