শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি অধিগ্রহণে ঋণের সুদ মওকুফ

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল ক‌রেসপ‌ন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 17:52:30

সিলেটের শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে জমি অধিগ্রহণ করতে নেওয়া ঋণের সুদের প্রথম কিস্তি মওকুফ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী পবন চৌধুরী স্বাক্ষরিত চি‌ঠি‌তে অর্থ মন্ত্রণাল‌য়ে এই আবেদন করা হয়। গত সপ্তাহে সাবেক অর্থমন্ত্রী  আবুল মাল আবদুল মুহিত ওই অনুমোদন ক‌রেন। দেয় । অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গে‌ছে, ২০১৫ সালের বেজা বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড  লিমিটেডের (বিআইএফএফএল) কাছ থেকে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নের জন্য  ২৯২ কো‌টি ৫০ লাখ টাকা ঋণ নেয়। একই বছর অর্থ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত একটি গ্যারান্টি প্রদান করে। বেজার প্রস্তাবের জবা‌বে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১ম কিস্তির সুদবাবদ পরিশোধকৃত ৩৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বর্তমান অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ প্রদানের করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হ‌লো।

আরো জানা গেছে, ইতোমধ্যে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি  ছয়টি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এ পর্ষন্ত বিনিয়োগ করেছে  ১১ হাজার ৪৩০ কোটি ৯৩ লাখ টাকা । আর ভবিষ্যতে সিলেট ইকনমি জোনে মোট বিনিয়োগের  পরিমাণ দাঁড়াবে ৩০ হাজার ৪০৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এছাড়া আ‌রো ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ১১৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার ডিবিএল গ্রুপ, আয়েশা ক্লথিং সাড়ে ৫ কোটি ডলার, আসওয়াদ কম্পোজিট ৩ কোটি ডলার, গ্রেটওয়াল সিরামিকস ৩ কোটি ২৫ লাখ এবং ডাবল গ্লেজিং ৮১ লাখ ডলার বিনিয়োগ করবে। এই অর্থনৈকি অঞ্চল থেকে বছরে ৩০ হাজার ৪০৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করা যাবে এবং কর্মসংস্থান হবে ৪৪ হাজার ৯৩১ জনের।

অর্থমন্ত্রীর  প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে জমি অধিগ্রহণের জন্য ঋণ নিয়েছে বেজা। যদিও আগামী ৫০ বছরে সেখানের জমি অধিগ্রহণ থেকে বেজার আয় হবে ১৬৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে বিআইএফএফএল কাছ থেকে ২৯২ কোটি টাকা ঋণ নেয় বেজা।

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন স্বাপক্ষে প্রথম তিন বছর ৫ শতাংশ এবং পরবর্তী বছরগুলোতে ৯ শতাংশ হারে ঋণের সুদ নির্ধারণ করা হয়। সেপ্টেম্বর ২০১৯ হতে সেপ্টেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যে ৭ কিস্তিতে সমহারে মোট ৪৬৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা সুদাসল পরিশোধ করতে হবে। যার মধ্যে সুদের পরিমাণ ১৭৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। কিন্তু শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমি বিনিয়োগ উপযোগী করতে অফসাইট অবকাঠামো নির্মাণ এবং যাবতীয় ইউটিলিটি ব্যয় নিশ্চিত করতে আরো অন্তত ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। সেক্ষেত্রে সুদ বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ ব্যহত হবে। তাই বিআইএফএফএল থেকে নেওয়া ২৯২ কোটি টাকা ঋণের সুদ পরিশোধের টাকা অনুদান হিসেবে বেজার বাজেটে বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন করা হচ্ছে।

বেজা সূত্রে জানা গেছে, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের ভিত্তিতে সিলেট বিভাগের চার জেলার মিলনস্থল মৌলভীবাজারের শেরপুরে গড়ে তোলা হয়েছে শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল। যার আয়তন ৩৫২ একর। এর মধ্যে ১১২ একর জমি রাখা হয়েছে জলাধার নির্মাণের জন্য। বাকি ২৩১ একর জমিতে কারখানা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে এ অথনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে এবং জমি বরাদ্দ চলছে।এখন পর্ষন্ত ৬টি প্রতিষ্ঠানকে ২৩১ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে বেজা। যার মধ্যে ডিবিএল গ্রুপকে ১৭০ একর, গ্রেটওয়াল সিরামিকসকে ২৫ একর, আসওয়া কম্পোজিট মিলস ও আয়েশা ক্লথিংকে ১৪ একর, ডাবল গ্লেজিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ৩ একর এবং ওরিয়ন গ্রুপকে ৫ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যদিও ওরিয়ন গ্রুপ ১০০ একর জমির আবেদন করেছিল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর