গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েক দফা ওঠানামা করেছে ডিমের দাম। দু’দিন আগেও পাইকারি বাজারে ফার্মের লাল ডিম ১শ বিক্রি হয়েছে, ১ হাজার ১শ ৯০ টাকা দরে আর সাদা ফার্মের ডিম ১ হাজার ১শ ৫০ টাকা। এছাড়া হাঁসের ডিম বিক্রি হয়েছে, ১ হাজার ৩শ ৭০ টাকা করে। সে হিসাবে একেকটি ডিমের দাম ১১ টাকা ৯০ পয়সা শুধু পাইকারিতেই বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, বিভিন্ন এলাকার খুচরা দোকান ও ভ্যানে প্রতি ডজন (১২টা) ডিম বিক্রি হয়েছে, ১শ ৫২ থেকে ১শ ৫৫ টাকায়। এতে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ে ১৩ টাকা করে, যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে।
তবে দুদিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে ডিমের দাম কিছুটা কমে মঙ্গলবার ১ হাজার ১শ ২০ টাকা থেকে ১ হাজার ১শ ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। যদিও ডিমের দাম কমার প্রভাব খুচরা বিক্রেতাদের এখনো কার্যকর করতে দেখা যায়নি।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের পরে ডিমের চাহিদা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া গরমে ডিমের উৎপাদন কমে গেছে। এছাড়া গরমে ডিম নষ্ট হচ্ছে। সে কারণে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, বড় বড় কোম্পানির ‘অদৃশ্য শক্তি’র যাদুমন্ত্রে প্রতিদিন ওঠানামা করে ডিমের দাম।
একটা সময় ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ সরাসরি ফার্ম থেকে ডিম সংগ্রহ করতে পারলেও এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। প্রান্তিক খামারিদের একটা বড় অংশ বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়বদ্ধ থাকে বলে অভিযোগ পাইকারি ব্যবসায়ীদের। এ জন্য তেজগাঁওয়ের ডিম ব্যবসায়ীদের সমিতিকেও দায়ী করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই- তিন দিনের তুলনায় ডিমের দাম কিছুটা কমেছে। এক ডজন লাল ডিমের দাম ১শ ৪৪ টাকা আর সাদা ডিমের দাম ১শ ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, কয়েকদিন আগেও প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হতো ১শ ১০ থেকে ১শ ২০ টাকা দরে।
হুট করে ডিমের দাম কেন বাড়ালো হলো, তার কোনো সদুত্তর দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
ডিমের এমন দামে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, দেশীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের কারসাজিতেই রাতারাতি ডিমের দাম অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে। তাছাড়া বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কোল্ড স্টোরেজ থাকে; সেখানে অভিযান চালালেই কমবে ডিমের দাম।
মিরপুর মাজার রোডের বাসিন্দা আজাদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত কয়েকদিন আগেও ডিম কিনেছি ১শ ২০ টাকা ডজন আর এখন সেই ডিম চাইছে, ১শ ৪৫ টাকা থেকে ১শ ৫০ টাকা।
তিনি বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা কোনো উত্তর দিতে চান না। বলেন, ‘নিলে নেন, না নিলে না নেন! পারলে কোম্পানিতে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, দাম বাড়লো কেন’!
এ প্রসঙ্গে আজাদ বলেন, এখন তো আমাদের পক্ষে আর এত জানাজানি করা সম্ভব না! কার কাছে জানতে চাইবো! এসব ‘ফাও চিল্লাচিল্লি’ ছাড়া এখন আর কিছুই হবে না। সব ব্যবসায়ীই এখন সিন্ডিকেট করে। এদেরও সিন্ডিকেট আছে।
এদিকে, স্থানীয় মহল্লার দোকানের ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকান ভাড়া, পরিবহন খরচসহ ইত্যাদি কারণে ডজনপ্রতি ১২ থেকে ১৫ টাকা বেশি দামে ডিম বিক্রি না করতে পারলে ব্যবসা করে লাভ কী!
মিরপুর বাজারের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ী ভাই ভাই ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শফিকুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, বড় বড় কোম্পানিগুলো এখন ডিমও স্টোরেজ করে রাখে। এছাড়া ছোট ছোট খামারিদের অবস্থা খুবই করুণ! অনেক খামারি খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মুরগি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতে আছে বলে মনে হয় না!
ক্ষোভ প্রকাশ করে এসময় শফিকুর রহমান বলেন, মাঝে-মধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তরের লোকজন এসে আমাদের জরিমানা করেন। কিন্তু আসল জায়গায় কেউ যায় না! খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং বড় বড় কোম্পানির সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে; নইলে ডিমের দাম আপাতত কমবে না।