ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও উন্নয়ন সমন্বয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. আতিউর রহমান বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটটি প্রাথমিকভাবে দেখে একে বাস্তবতার প্রতি অনেকটাই সংবেদনশীলই মনে হচ্ছে। একই সঙ্গে এই বাজেটটিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরেকটু কল্যাণমুখী হওয়ার সুযোগ যে ছিল সেটিও মানতে হবে।
বার্তা২৪.কম-কে বাজেটোত্তর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘২০১৯-২০-এ বাংলাদেশের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪-এ এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছিলো ৭ লক্ষ ৬১ হাজার কোটি টাকার বেশিতে। অর্থাৎ এ সময়কালে গড়ে বছরে বাজেটের আকার বেড়েছে ৭.৬ শতাংশ হারে। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও চলতি বছরের প্রস্তাবিতর চেয়ে বাজেট বেড়ছে। তবে আগের হারে বাড়েনি। মাত্র ৪.৬ শতাংশ বেড়ে ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা হয়েছে। ফলে বাস্তবতার প্রতি সংবেদনশীল বাজেট-প্রণেতারা সঙ্কোচনের পথেই এগুতে চাইছেন- তা দৃশ্যমান।’
মোট রাজস্ব আদায়ের যে ৫ লক্ষ ৪৫ হাজার কোটি টাকার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেটিকে সময়োচিত মনে করলেও এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করেন এই উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে প্রাথমিক বিচারে এবারের বাজেটটিকে অনেকটাই বাস্তবমুখী ও সময়োচিত হিসেবেই দেখতে হবে। তবে যেহেতু অনেকখানি কাটছাট করতে হয়েছে, তাই এই সঙ্কুচিত বাজেট বাস্তবায়নে আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষতা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে।’
মুদ্রানীতির সাথে সমন্বয় করে রাজস্বনীতিকে সংযত রাখার অংশ হিসেবে বাজেট ঘাটতি ৪.৫ শতাংশ রাখার আকাঙ্ক্ষাটিও বাস্তবতার নিরিখে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৬.৭৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাকে তিনি উচ্চাভিলাষী মনে করেন। তাঁর মতে- “মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে তিন শতাংশের মতো কমিয়ে সাড়ে ছয় শতাংশে নামিয়ে আনা মোটেও সহজ হবে না।’ এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বাজেট ঘাটতি আরো কমিয়ে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের পরিমান কমানোর কোনো বিকল্প নেই বলেও স্মরণ করিয়ে দেন সাবেক এই গভর্নর।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো সামাজিক খাতে বরাদ্দ, কৃষির জন্য বরাদ্দ, এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে সহায়ক খাতে/কর্মসূচিতে/প্রকল্পে বরাদ্দে এই কাটছাটের প্রভাব যতোটা সম্ভব কম ফেলা যায় ততোই কল্যাণকর বলে মনে করেন ড. রহমান।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- “প্রায় এক দশক ধরেই আমাদের মোট জাতীয় বাজেটের ১৫-১৭ শতাংশ যাচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাবদ। বরাদ্দের এই ধারাবাহিকতার প্রভাবেই দারিদ্র্য ও অতিদারিদ্র্য হার নাটকীয় মাত্রায় কমিয়ে আনা গেছে। এবারও বাজেটের ১৭ শতাংশের বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাবদ। তবে লাগামহীন মূল্যস্ফীতির হাত থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে এখানেও বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিছুটা প্রবৃদ্ধি আশা করেছিলাম। মূল্যস্ফীতি যেহেতু ১০ শতাংশের আশেপাশে তাই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ অন্তত ১০ শতাংশ বাড়ালে কার্যক্রমটির উপকারভোগিরা মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট জোর পেতেন বলে মনে করি।”