সঙ্কট কাটিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার নির্দেশনা আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে নেই বলে মনে করে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাস্তবতা আমলে না নিয়ে অর্থনীতির চলকগুলোতে অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য বেধে দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপিত বাজেটের বিষয়ে পর্যালোচনা তুলে ধরতে সিপিডির পক্ষ থেকে আয়োজন করা সংবাদ ব্রিফিংয়ে শুক্রবার (৭ জুন) এ সব কথা বলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
রাজধানীর একটি সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিদ্যমান সময়ে প্রবৃদ্ধির দিকে না থাকিয়ে বাজেটে সঙ্কট মোকাবেলায় উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল।
সঙ্কটময় চ্যালেঞ্জিং সময়ে একটা সাধারণ বাজেট দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আর দশটা বাজেটের মতই এবারের বাজেট গতানুগতিক। এই বাজেট দিয়ে সঙ্কট মোকাবিলা সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পণ্যের মূল্যস্তর গত কয়েক বছরে অনেক উপরে চলে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ অস্বস্থিতে রয়েছেন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে প্রায় ১০ শতাংশ ম্যূলস্ফীতি হলেও শ্রমিকদের মূল মজুরি বাড়ছে মাত্র ৫ শতাংশ। এই ম্যূলস্তর সামাল দিতে দরিদ্র মানুষ হিমশিম খাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যবহার্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে তাদের জীবন যাত্রা বেশি কঠিন হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগাম অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট দেখে মনেই হয়নি এটা নতুন সরকারের নতুন বাজেট। বরং আমার কাছে মনে হয়েছে এটা নতুন সরকারের একটা পুরাতন বাজেট।
তিনি বলেন, নতুন একজন অর্থমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর কাছে সবাই যে ধরনের মুন্সিয়ানা আশা করেছিলেন, বাস্তবে তা পাওয়া যায়নি। বর্তমান সঙ্কট সামাল দিতে বেসরকারি খাতে ব্যয় সঙ্কোচনের উদ্যোগ নেয়া হলেও সরকারি খাতে তা দেখা যায় না।
”সরকারি ব্যয়ে কবে অস্টারিটি দেখা যাবে?” প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এই ধরনের সরকারি ব্যয়ের মাধ্যমে অর্থনীতিকে সঙ্কট থেকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনা যাবে না। বরং এর মাধ্যমে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার সময়কাল আরও দির্ঘায়িত হবে।
এবারের বাজেট খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির বড় কারণ হতে পারে মন্তব্য করে মোয়াজ্জেম বলেন, অনেক পণ্যে ও সেবায় ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে চার মাস অন্তর বিদ্যুত ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধির ঘোষণা। এ সব বিষয় মূল্যস্ফীতি উস্কে দেয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মূল প্রবন্ধে ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশে উন্নতি করা ও মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক শতাংশে নামিয়ে আনতে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের যে পরিবেশের দরকার তা নিশ্চিত করার উপায় বাজেটে উঠে আসেনি।
বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির কয়েকটি টার্গেট দেয়া হলেও তা অর্জনের উপায় সম্পর্কেও কোন নির্দেশনা বাজেটে নেই।
অর্থনীতির প্রতিটি জায়গায় অস্বস্থিরতা রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, রাজস্ব আয় থেকে শুরু করে ব্যয় ব্যবস্থাপনা, ব্যংক থেকে সরকারের ঋণ, তারল্য সঙ্কট, রফতনিতে নিম্নমূখী প্রবৃদ্ধি, মুদ্রার বিনিময় হারে পতনসহ বিভিন্ন সঙ্কট মোকাবেলা করে প্রবৃৃদ্ধির বড় লক্ষ্য অর্জনের সুযোগ কম।
ঘাটতি মোকাবিলায় ব্যাংক থেকে সরকারের পক্ষে বড় ঋণ নেয়ার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, এটা করা হলে ব্যক্তি খাতে ঋণ প্রবাহ কমবে। আবার বেশি সুদ পরিশোধের চাপও বাড়বে।
সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে দক্ষতা আনার তাগিদ দেন ফাহমিদা। তিনি বলেন, বছরের পর বছর প্রকল্পগুলো স্থবির থাকাইয় বাস্তবায়ন কাল ও ব্যয় বেড়ে যায়। এর ফলে প্রকল্প থেকে প্রাপ্য সেবার ব্যয়ও বেড়ে যায়।