সাগরের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে অনেক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, ঈদের আগেই মুখোমুখি বৈঠক করা হবে। কয়েকটি কোম্পানি সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।
বার্তা২৪.কম এর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেছেন। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আরও বলেন, সময় বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে, আগ্রহী বিদেশি কোম্পানিগুলোকে নিয়ে সেমিনার করা হয়েছে। এরপর তাদের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসার প্রস্তুতি চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, কৌশলগত কারণে কোনো কোম্পানির নাম আমরা প্রকাশ করতে পারছি না। কিছু রীতি মেনে চলতে হয়, কোনো বিদেশি কোম্পানির নাম এই পর্যায়ে প্রকাশ করা ঠিক হবে না। তবে এটুকু বলতে পারি, বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা কোম্পানি বিড ডকুমেন্ট সংগ্রহ করেছে। তারা টাকা দিয়ে আমাদের ডাটাও কিনেছে।
বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে ১৫টি এবং অগভীর সমুদ্রে ১১টি ব্লক আছে। অগভীর সমুদ্রের দুটি ব্লকে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ভারতের কোম্পানি ওএনজিসি। আর ২৪টি ব্লকে দরপত্র ডাকা হয়েছে গত ১১ মার্চ। দরপত্র জমার জন্য ৬ মাস (৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সময় দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। এরপর ২০১৯ সালে নতুন পিএসসি আপডেট করা হলেও দরপত্র ডাকা হয়নি।
এবার বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের ৫৫টি কোম্পানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমেরিকার একাধিক কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছে। সাগর সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। ২০১০ সালে গভীর সমুদ্রে ডিএস-১০ ও ডিএস-১১ ব্লকে কাজ নেয় কনোকো ফিলিপস। তারা ২ডি জরিপ শেষে গ্যাসের দাম বাড়ানোর দাবি করে। সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় কাজ ছেড়ে চলে যায়। এছাড়া চুক্তির পর কাজ ছেড়ে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ার স্যান্তোস ও দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো দাইয়ু।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্যই আকর্ষণীয় করা হয়েছে পিএসসি। আগের পিএসসিগুলোতে গ্যাসের দর স্থির করা দেওয়া হলেও এবার গ্যাসের দর নির্ধারিত করা হয়নি। ব্রেন্ট ক্রডের আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে উঠানামা করবে গ্যাসের দর। প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রেন্ট ক্রডের ১০ শতাংশ দরের সমান। অর্থাৎ ব্রেন্ট ক্রডের দাম ৮০ ডলার হলে গ্যাসের দাম হবে ৮ ডলার। যা বিদ্যমান পিএসসিতে যথাক্রমে অগভীর ও গভীর সমুদ্রে ৫.৬ ডলার ও ৭.২৫ ডলার স্থির দর ছিল। ব্রেন্ট ক্রডের দামের ক্ষেত্রে সারা মাসের দর গড় হিসাব ধরা হবে।
দামের পাশাপাশি সরকারের শেয়ারের অনুপাতও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মডেল পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে বাংলাদেশের অনুপাত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আর কমতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার। গভীর সমুদ্রে ৩৫ থেকে ৬০ শতাংশ এবং অগভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের হিস্যা ৪০ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠানামা করবে।
গত ৮ মে পিএসসি নিয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার করা হয়। সেখানে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রে কাজ করতে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছে। এই সেমিনারেও ১৫টির বেশি আন্তর্জাতিক কোম্পানি অংশ নিয়েছে। দরপত্রে দেশের স্বার্থের পাশাপাশি বিনিয়োগকারী কোম্পানির স্বার্থও দেখা হয়েছে। ফলে এবারের দরপত্র নিয়ে আমরা বেশ আশাবাদী।
ওই সেমিনার প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, আমাদের সাগরাঞ্চল একটি সমৃদ্ধ এলাকা। আন্তর্জাতিক দরপত্রে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আবার মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের ডাটার কারণে তারা বুঝতে পারছে এখানকার সম্ভাবনার তথ্য। বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হয় আমরা সেটাই করেছি।