বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের সম্ভাবনা অদক্ষতার ফাঁদে আটকা পড়েছে বলে মনে করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
বুধবার (১২ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাজেট সংলাপ ২০২৪’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই ফাঁদ আমাদেরই তৈরি। এটা বাইরে থেকে আরোপ করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের উপস্থাপন করা মূল প্রবন্ধের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে হোসেন জিল্লুর বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বিনিযোগের সিদ্ধান্তগুলো সমন্বিত চিন্তা থেকে না আসায় অবকাঠামো ও সেবার সমন্বয় হচ্ছে না।
তিনি বলেন, শিক্ষায় বরাদ্দের বড় অংশ চলে যাচ্ছে অবকাঠামো খাতে। আবার ৫০০ বেডের হাসপাতাল তৈরি করে সেবা দেওয়া হচ্ছে ৫০ বেড হাসপাতালের।
প্রকল্প নির্বাচনে বড় অদক্ষতার কারণেও সরকারের অর্থের অপচয় হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, অনেক প্রকল্প মাঝপথে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই অদক্ষতাকে মহামারির সমতুল্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, অনেক মন্ত্রণালয় বছরের শুরুতে বড় বরাদ্দ নিয়ে বছর শেষে বাস্তবায়ন অদক্ষতার কারণে বরাদ্দ ফেরত দিয়ে থাকে। এই ধরনের অদক্ষতার ফাঁদ থেকে মুক্তি নিশ্চিত করতে বাস্তবায়ন দক্ষতা, গভর্নেস ও উন্নয়ন কৌশলের সমস্যাগুলো দূর করার তাগিদ দেন তিনি।
গত চার পাঁচ দশক ধরে পোশাক শিল্প ও রেমিট্যান্সে ভর করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতের জন্য নতুন প্রবৃদ্ধি চালক অনুসন্ধান করতে হবে।
দেশের উদ্যোক্তা শ্রেণি ও শ্রমিকদের সোনার ডিম পাড়া হাঁস আখ্যায়িত করে হোসেন জিল্লুর বলেন, সেই সোনার হাঁসকে লালন না করে প্রতি বছর জবাই করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নতির তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ঋণের সুবিধার চাইতে উদ্যোক্তাদের বেশি প্রয়োজন ব্যবসার পরিবেশ। তিনি বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এখনও ব্যবসায় বড় বাঁধা হয়ে আছে।
১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কথা বলা হলেও বাস্তবে চালু হয়েছে চার-পাঁচটা বলে জানান তিনি।
এ সব সমস্যার সমাধান অর্থনীতিতে নেই দাবি করে তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক অর্থনীতির মাধ্যমেই এই ধরনের সমস্যার সমাধান করতে হবে।
দেশের পুরো সম্ভাবনা রাজনৈতিক অর্থনীতির লৌহত্রিভুজে আটকে আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জবাবদিহিতার অভাব, কৌশলগত দক্ষতার ঘাটতি আর দুর্নীতির সার্বিক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের এই ত্রিভুজ ভাঙতে হবে।