অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে দেশের অর্থনীতি দুর্বলতম অবস্থানে রয়েছে বলে দাবি করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি ও সংসদ সদস্য হিসেবে ভূমিকা রাখার মাধ্যমে আমার জানা মতে এবারের চেয়ে দুর্বলতম অবস্থা অতীতে কখনও ছিল না।
বুধবার (১২ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘বাজেট সংলাপ ২০২৪’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের প্রাক্কালে বড় ধরনের এডজাস্টমেন্ট নিশ্চিত করতে যে সময়ে দেশের অর্থনীতির সক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকার দরকার ছিল, ঠিক সে সময়ে দুর্বলতা প্রকট হয়েছে।
সংকটের কারণে এখন মূল প্রশ্ন এটা না যে সামষ্টিক অর্থনীতির স্টেবিলিটি ফিরে আসবে কি না। বরং আজকে প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে এই চাপের মধ্যে অর্থনীতি সাসটেইন করবে কি না।
সিপিডির ট্রাস্টি বোর্ডের ট্রেজারার সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ছাড়াও রাজনীতি, অর্থনীতি ও ব্যক্তি খাতের বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। প্রস্তাবিত বাজেটে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোর লক্ষ্যমাত্রায় অসঙ্গতি রয়েছে বলে অনুষ্ঠানে দাবি করেন ফাহমিদা খাতুন।
মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ফাহমিদা বলেন, এর ফলে দুর্নীতিবাজরা উৎসাহিত হবেন। সৎ করদাতারা নিরুৎসাহিত হবেন।
কালো টাকা সাদা করার এই সুযোগকে ‘স্টেট স্পন্সরশিপ অব চিটিং’ হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম বলেন, চুরি, ডাকাতি খুন করে আয় করা টাকাও সাদা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
আগে দুদককে এ বিষয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হলেও এই ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটা কার স্বার্থে করা হয়েছে এমন প্রশ্ন করেন তিনি।
চুরি এনকারেজ করে কি অর্থনীতি স্ট্রং হবে? যারা চুরি করে তারা কি দেশের উন্নয়নের জন্য টাকা আনবেন? এমন হলে আমি এবার কর না দিয়ে আগামী বছর ১৫ শতাংশ কর দেওয়ার সুযোগ নেব, তিনি বিলেন।
বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ দেওয়ার আগে এই বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু আছে বা জনগণ কতটুকু সুফল পাবে সে বিষয়ে সাহসিকতার সঙ্গে বিচার বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় এমন অনেক প্রকল্প অনুমোদন করতে হয়েছে যেগুলোর সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে একমত ছিলাম না। আবার এসব প্রকল্প খুব কাজে লাগবে বলেও আমার মনে হয় না।।
মূলত জিডিপি প্রবৃদ্ধির কারণেই দেশে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে মন্তব্য করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, প্রবৃদ্ধি সেক্রিফাইস করলে মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে আসবে। অনেক বড় অর্থনীতির দেশগুলোও একই পথ দিয়ে গেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য সরবরাহ, কাজের বিনিময়ে খাদ্যসহ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে অন্তত ৩০ শতাংশ মানুষকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি বলেন, সরকারের এ সব উদ্যোগ না থাকলে মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ ছাড়াতে পারত।
তবে একই সাথে দেশে বৈষম্যও বাড়ছে দাবি করে তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান আমল থেকে কিছু খাত ও গোষ্ঠী খেয়ে পরে পুষ্ট হয়ে আছে। এসব দিকেও কঠোর নজর দেওয়ার দরকার আছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
রেন্ট সিকিং নিয়ন্ত্রণ করে দক্ষতা নিশ্চিত করতে পারলে সরকারি ব্যয় বিশেষ করে ভর্তুকির চাপ কমে আসবে বলে মনে করেন বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।
তিনি বলেন, ভারতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা থাকায় সেখানে প্রতি ইউনিট পাইকারি বিদ্যুতের দাম পাঁচ টাকার কিছু বেশি। অথচ অদক্ষতার কারণে বাংলাদেশে ভর্তুকির বড় একটা অংশই চলে যাচ্ছে এ খাতে।
রেন্ট সিকিংয়ের কারণে অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ব্যয় প্রতিবেশী অনেক দেশের চাইতে এখানে বেশি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
অর্থনীতির অপ্রদর্শিত অংশের আকার নির্ধারণের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রাক্বলন অনুযায়ী ২০১২ সালেই অর্থনীতির ৪০ শতাংশ অপ্রদর্শিত ছিল। এই আকার পুনঃনির্ধারণ করে তা অর্থনীতির মূল চ্যানেলে আনার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অসঙ্গতি দূর করার পরামর্শ দেন তিনি।