স্টক এক্সচেঞ্জ ইলেক্ট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেমের (ইএসএস) মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শততম ইস্যু হিসেবে টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের শেয়ার প্রো-রাটার ভিত্তিতে বরাদ্দ দেয়া হয়৷।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) ডিএসই ট্রেনিং একাডেমিতে এই বরাদ্দ প্রদান করা হয়। শততম ইস্যুর শেয়ার বরাদ্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাওিক আহমেদ শাহ, প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খাইরুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদ, টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ জালাল উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের উপ-মহাব্যবস্থাপক হাসনাইন বারী, সিডিবিএলের মহা-ব্যবস্থাপক রাকিবুল ইসলাম চৌধুরী এবং ডিএসই’র লিস্টিং অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের সহকারি মহাব্যবস্থাপক মো. রবিউল ইসলামসহ প্রতিষ্ঠানসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ৷
ডিএসই’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে স্মার্ট বাংলাদেশের চিন্তা করছেন তার একটি ছোট নমুনা হলো ইএসএস সফটওয়্যারের ১০০তম ইস্যু পরিচালনা। ডিএসই স্মার্ট বাংলাদেশের অটোমেশনের হাব হতে পারে। বিশ্বব্যাপী ক্যাপিটাল মার্কেট ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে চলছে। এখন পুঁজিবাজারের অধিকাংশ কাজ টেকনোলজির মাধ্যমে চলছে। আজকে ইএসএস সিস্টমে যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করছি তা দেশীয় একটি সফটওয়্যার। স্মার্ট বাংলাদেশ সেদিন বাস্তবায়িত হবে যেদিন আমরা নিজস্ব টেকনোলজি ব্যবহার করে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবো। এই ইএসএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে শুধু অর্থ সাশ্রয় করিনি। এতে আইপিও প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। একইসাথে এর মাধ্যমে আমরা সুশাসন নিশ্চিত করতে পারছি। আশা করছি ভবিষ্যতে এই সফটওয়্যার আরও বড় পরিসরে আসবে। বর্তমানে রাইট শেয়ার ইস্যুর বিষয়টি এই সফটওয়্যারে যুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বিএসইসি’র অনুমোদনের পর এই সফটওয়্যার পূর্ণতা পাবে বলে আমি মনে করেন।
প্রো-রাটা পদ্ধতিতে ইএসএস-এর মাধ্যমে শেয়ার বরাদ্দের শততম ইস্যু টেকনো ড্রাগস লিমিটেড। এটি ডিএসই’র একটি মাইলফলক৷ আমরা গর্বিত ইএসএস-এর মাধ্যমে শততম ইস্যু শেয়ার বরাদ্দ করতে পেরে৷ ইলেকট্রোনিক সাবসক্রিপসন সিস্টেম (ইএসএস) সফটওয়্যারে নতুন যে মডিউল তৈরি করা হয়েছে, তা শেয়ার বরাদ্দের আধুনিক পদ্ধতি। যা দেশের পুঁজিবাজার, বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ের জন্য একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর ফলে খুবই অল্প সময়ে আইপিও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়৷ এই পদ্ধতিতে খুবই সহজে, স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে শেয়ার বরাদ্ধ দেয়া যায়৷
পরিশেষে, আমি আশা করি কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে যে মূলধন উত্তোলন করেছে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করে তাদের ব্যবসাকে আরো সম্প্রসারণ করবে৷
তার আগে অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্যে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাত্বিক আহমেদ শাহ বলেন, শুরুতে ইএসএস বিদেশি সংস্থার সহযোগিতায় যাত্রা শুরু হলেও, ২০১৬ সাল থেকে স্টক এক্সেচেঞ্জের নিজস্ব মেধা ও দক্ষতায় ইএসএস সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে। রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স এবং স্বল্প সময়ে শেয়ার বন্টন নিশ্চিতকরণে ইএসএস পুঁজিবাজারের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনামূলক বিভিন্ন রেগুলেটরি আপগ্রেডেশন, এমেন্ডমেন্ট স্বল্প সময়ে ইএসএস-এ সংযোজনের সক্ষমতা সত্যি প্রশংসনীয়। ইএসএস ভবিষ্যতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় এবং টেকসই পুঁজিবাজার গঠনে গতিশীল অবদান রাখবে।
টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ জালাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিএসই ও ইস্যু ম্যানেজারদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আমাদের ডিএসইতে তালিকাভুক্তির কার্যক্রম চালু হয়েছে। আমি চাই নতুন নতুন মেডিসিন প্রোডাক্টগুলো বাংলাদেশে তৈরি হোক। এই কোম্পানির আইপিওতে ২৪.৬৪ গুণ বেশি সাবস্ক্রিপশন হয়েছে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমি আশা করি, আমরা বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবো।
সিএসই’র উপ-মহাব্যবস্থাপক হাসনাইন বারী বলেন, আজকে ইএসএস এর মাধ্যমে ১০০তম সাবসক্রিপশন। এ সফটওয়্যারটি মূলত প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর জন্য তৈরি হয়েছিল। এখন এটি একটি মাল্টিপারপাস এপ্লিকেশন হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে। আগে এই বিষয়ে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হতো এখন আমাদের এই খরচ অনেক কমে গেছে।
সিডিবিএল-এর মহাব্যবস্থাপক রাকিবুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সিডিবিএল ক্যাপিটাল মার্কেটে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। সিডিবিএল সবসময় অনেক উদ্ভাবনীর সাথে থাকে। ইএসএস-এর খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে সিডিবিএল কাজ করে যাচ্ছে। সিডিবিএল ইএসএসকে বিনিয়োগকারীদের তথ্যের ভেরিফিকেশন প্রদান করে। আমরা সিডিবিএল ইএসএস-এর একটি পার্ট হতে পেরে খুবই আনন্দিত।
ডিএসই’র লিস্টিং ডিপার্টমেন্টের সহকারি মহাব্যবস্থাপক মো. রবিউল ইসলাম ইলেক্ট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম (ইএসএস) সম্পর্কে বলেন, সফটওয়্যারটির ২০০৯ সালে পাবলিক ইস্যু রুল অনুযায়ী প্রবর্তন করা হয়, ১ মার্চ, ২০১০-এ দুবাই ভিত্তিক "ইনফোটেক মিডল ইস্ট" দ্বারা তৈরি করা হয় । সফটওয়্যারটির তৈরি ব্যয় ছিল ৭০,৮৭৫ ডলার এবং বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি ছিল ৪৫,৩৬০ ডলার (প্রথম ৩ বছর) এবং পরবর্তী বছরগুলোর জন্য ১৭,৭১৮ ডলার। বিশাল খরচ কমাতে এবং পাবলিক ইস্যু বিধিগুলির ঘন ঘন সংশোধনের জন্য, ডিএসই ২০১৪ সালে ডিএসই'র অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তাদের দ্বারা সাম্প্রতিক প্রযুক্তি এবং আরও উন্নত বৈশিষ্ট্যসহ নতুন বুক বিল্ডিং সিস্টেম তৈরি করেছে যা বর্তমানে ইলেকট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম নামে পরিচিত। সিস্টেমটি ডিএসই ও সিএসই উভয় এক্সচেঞ্জের মালিকানাধীন।
পরবতীর্তে ডিএসই’র লিস্টিং ডিপার্টমেন্টের সহকারি মহাব্যবস্থাপক মো. রবিউল ইসলাম প্রো-রাটার ভিত্তিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য মোট ১০০ কোটি টাকার বিপরিতে ২৪৮৭ কোটি ১৮ হাজার ১০৪ টাকার আবেদন জমা পড়ে, যা ২৪.৬৪ গুণ বেশি। প্রতি ১০,০০০ টাকা আবেদনের বিপরীতে নিবাসী বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীগণ ১১টি শেয়ার এবং অনিবাসী বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীগণ ২০টি শেয়ার বরাদ্দ পায়।
ডিএসই’র প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খাইরুল বাসার আবু তাহের মোহাম্মদ বলেন, আজকের ইলেক্ট্রনিক সাবস্ক্রিপশন সিস্টেমের মাধ্যমে ১০০তম ইস্যুতে টেকনো ড্রাগস লিমিটেডের আইপিও-তে সর্বোচ্চ ২৪শত কোটি টাকার সাবস্ক্রিপশন একটি মাইলফলক তৈরি করেছে। আমি আশা করি এটি আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অনুপ্রাণিত করবে। এছাড়াও তিনি আশা পোষণ করেন কোম্পানিটি সকল নিয়ম-কানুন মেনে চলবে এবং বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করবে। ডিএসইর পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।