বেনাপোল কাস্টমসে ১২ বছর পর রাজস্ব আয়ে রেকর্ড- ৬১৬৪ কোটি টাকা

ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি

আজিজুল হক, সিনিয়র করেসপন্ডডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর) | 2024-07-02 19:19:10

দীর্ঘ ১২ বছর পর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার পর তা রেকর্ড ছুঁয়েছে, বেনাপোল কাস্টমস হাউস। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আমদানি পণ্য থেকে এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৫ হাজার ৯শ ৪৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ৬ হাজার ১শ ৬৫ কোটি টাকা।

এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২শ ১৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বেশি আর শতকরা প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ বেশি। 

এসময় এ বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ২১ হাজার ৭শ ৮০ মেট্রিক টন পণ্য।

বৈশ্বিক মন্দার মধ্যে এ অর্জন পদ্মাসেতুতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে কাস্টমস বন্দরের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বন্দরে নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যসংশিষ্টরা।

১৩ স্থলবন্দরের মধ্যে বেশি রাজস্ব আয় হয় বেনাপোলে
রাজস্ব আয়ের দিক থেকে চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দরের পর বেনাপোল স্থলবন্দরের অবস্থান। দেশের চলমান ১৩টি স্থলবন্দরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় আর রাজস্ব আসে বেনাপোল বন্দর থেকে।

তবে আরো বেশি বাণিজ্যের চাহিদা থাকলেও সুষ্ঠু বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা আর অবকাঠামোগত নানান প্রতিবন্ধকতার কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারতেন না আমদানিকারকেরা। এতে গত ১২ বছর ধরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছিলেন না কাস্টমস হাউস, বেনাপোল।

অবশেষে, ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বর্তমান সরকার সবচেয়ে বেশি অবকাঠামো উন্নয়ন করে বেনাপোল বন্দরে আর সেইসঙ্গে পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় অন্য বন্দর ব্যবহারকারীরাও আমদানি শুরু করেন বেনাপোল দিয়ে। এর সুফল পেলো এ যাবত কালের সর্বোচ্চ রাজস্ব আয়ে রেকর্ড গড়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউস।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ২১ হাজার ৭শ ৮০ মেট্রিক টন পণ্য, ছবি- বার্তা২৪.কম


যেসব পণ্যে রাজস্ব আয় বেশি

বিদায়ী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে, ফেব্রিকস, পচনশীল দ্রব্য, ইংগড, ট্রাক চেচিস, মোটরপার্টস এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাঁচামাল থেকে আর সর্বোচ্চ রাজস্ব প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল আমদানিকারক পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বিডি, এসএমসিএল নিলয়এসএম করপোরেশন

আমদানিকারক আব্দুস সামাদ জানান, ৫ ঘণ্টায় এখন সহজে বেনাপোল থেকে পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে। পদ্মাসেতু চালুর আগে ফেরিতে যানজট ও ঘন কুয়াশার কারণে দুইদিন পর্যন্ত সময় লাগতো। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে যারা অন্য বন্দর ব্যবহার করতেন তারা এখন বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করছেন। এটাও রাজস্ব বৃদ্ধির বড় একটা কারণ।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, এ বছরের শেষের দিকে বেনাপোল বন্দরে নির্মাণাধীন কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল চালু হবে। এতে ব্যাপক সুবিধা সৃষ্টি হবে বন্দরে। তখন এপথে রাজস্ব আয় আরো বাড়বে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বিপুল জানান, পদ্মাসেতুর কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে গত বছর সক্রিয় ছিল কাস্টমস।

তিনি বলেন, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দর বেশি ব্যবহার করেছেন।

বেনাপোল স্থলবন্দর পরিচালক রেজাউল করিম জানান, রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে কাস্টমসের পাশাপাশি বন্দরেরও ভূমিকা রয়েছে। তাদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, বন্দরে অটোমেশন প্রক্রিয়া চালু, অবকাঠামো উন্নয়ন ও পণ্যের ওজন স্কেলের সঠিক পরিমাপের কারণে রাজস্ব আয়ে এবার রেকর্ড গড়েছে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার রাফেজা সুলতানা জানান, রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে বর্তমান কাস্টমস কমিশনারের সঠিক দিকনির্দেশনা ও কাজের স্বচ্ছতার কারণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা এ বছর ছাড়িয়ে গেছে।

এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দরে আমদানি পণ্য থেকে সরকারের রাজস্ব এসেছিল ৫ হাজার ৭শ ৮৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরে ঘাটতি দেখা দেয় ১ হাজার ৪শ ৫০ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে কাস্টমসে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩শ ৯২ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১ হাজার ১শ ৪৫ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১শ ৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেশি আদায় হয়েছিল ৪৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা আবার ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ২শ ৩ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১শ ৩৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ৪শ ৫২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং ২০১১-১২ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১শ ৯৪ কোটি টাকা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর