বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এমপি বলেছেন, বিদ্যুতের দাম সময় অনুযায়ী সমন্বয় হবে, সরকার যখন বলবে তখন সমন্বয় করা হবে। আমরা চাই, যতো কম সময়ে সমন্বয় করা যায়।
বৃহস্পতিবার (০৪ জুন) দুপুরে বিদ্যুৎ বিভাগের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী আর বলেন, প্রত্যেকটি বিতরণ কোম্পানি লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। আমরা লোডশেডিং বন্ধ করতে পারতাম, কিন্তু ডিজেলের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালাইনি। কিছু তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাখা হচ্ছে বিকল্প হিসেবে। যাতে কোনোটি বন্ধ হয়ে গেলে চালাতে পারি। তবে চুক্তি হচ্ছে কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ থাকছে না। একটা বিষয় ভালো, তেলের বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসছি। বেজডলোড বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চলে এসেছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের উৎপাদন ও বিক্রির মধ্যে অনেক তারতম্য রয়ে গেছে। বিশেষ করে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে। সরকার বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে থাকে। ধীরে ধরে এখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেন, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর চুক্তি যখন করলেন তখন দাম কম ছিল, এখন বেশি কেন। যখন চুক্তি করি তখন ডলারের দাম ছিল ৭৯ টাকা, এখন ১১৭ টাকা। শুধু ডলারের কারণেই অনেক তারতম্য ঘটেছে। শুধু কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রে ডলারের কারণে ব্যয় বেড়েছে।
তিনি বলেন, বন্যার কারণে সিলেট অঞ্চলে অধিকাংশ উপকেন্দ্র পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বন্যার পানি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ৭০০ নদীর দেশ, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ জ্বালানি সরবরাহ রাখাটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের মতো দেশে অর্থ নিয়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জ থাকে সবসময়। গত একমাস যাবত বিদ্যুতের কিছুটা ঘাটতি ছিল, ভবিষ্যতের যাতে এমন অবস্থা না হয় তার জন্য পরিকল্পনা করা দরকার। বিদ্যুৎ সরবরাহ উন্নতি হচ্ছে, আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে আরও ভালো হবে। আমাদের একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল না থাকায় গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে উন্নতি হবে।
নসরুল হামিদ বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিভাগ ১০১ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে, আর জ্বালানি বিভাগ ১০৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করেছে। জাতীয় পর্যায়ে এডিপি বাস্তবায়নের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। এবারও এডিপি বাস্তবায়নের শীর্ষে থাকবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ৩৮ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা, সরকারের ২৩ হাজার কোটি টাকা, আর নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। জ্বালানি বিভাগে ১০৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সাধারণ নিজস্ব অর্থ ব্যয় করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। তারা গ্যাস কেনা তেল কেনায় নিজেদের অর্থ ব্যয় করে। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্পে কিছু অর্থ প্রয়োজন হয়।
বিদ্যুৎ খাতে ২৯১৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সৈয়দপুরের বিদ্যুৎ কেন্দ্র শেষ করতে কিছু টাকা লাগবে। অনেকদিন ধরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কাজ করছি, এটা খুবই জরুরি। কুমিল্লা জোন ও যশোর জোনে যে চাহিদা বাড়ছে সেখানে কাজ হবে। প্রিপেইড মিটার স্থাপন ট্রান্সমিশন লাইন আধুনিকায়নে ব্যয় হবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, অবিলম্বে ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে নিশ্চিত করা। ২৫০০ মেগাওয়াটের এলওআই দিয়েছি, এবছরের শেষে না হলে সামনে বছরের মধ্যে চলে আসবে। আরও ৬০০০ মেগাওয়াট পাইপলাইনে রয়েছে। এগুলোর সবগুলো বেসরকারি, যে কারণে বাজেটের কোন ইস্যু নেই। ২০৪০ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্লিন এনার্জির দিকে যেতে চাই।
জমির পাশাপাশি সোলারের কিছু টেকনিক্যাল সমস্যাও রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, সৌর বিদ্যুতে ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সারা বছরে ১৭-২০ শতাংশ বিদ্যুৎ দিতে পারে। অর্থাৎ ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ দিতে পারে না। স্টোরেজ রাখতে হবে, আমরা বায়ু বিদ্যুৎ নিয়ে ভাবছি। কুরুশকুল বায়ু বিদ্যুতে ভালো ফল এসেছে। ৬০০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ এলে যেকোনো সময় সিস্টেম ফল করতে পারে। এ জন্য সিস্টিম আপগ্রেডেশনের একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে বিদ্যুতের ৬টি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হতে পারে। মহেশখালী থেকে গ্যাসের আরেকটি সমানতরাল পাইপলাইন করার জন্য আলোচনা হবে। আমরা চাই প্রকল্পটি জি টু জি ভিত্তিতে করার জন্য চীনের কাছে সহায়তা চেয়েছি। আমাদের ২টি এফএসআরইউ রয়েছে, আরও দু’টি এফএসআরইউ আনতে চাই। ২০২৭ সালের পর আর ওকোন গ্যাস ঘাটতি থাকবে না। তখন দৈনিক ৬ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের দরকার হবে।