রুফটপ সোলারের সম্ভাবনা অনেক, তবে অনেকের মধ্যে জনসচেতনতা ও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কোয়ালিটি পণ্য নিশ্চিত করা জরুরি।
বুধবার (১০ জুলাই) দৈনিক বণিক বার্তা ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)-এর যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে রুফটপ সোলারের সিস্টেম সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে এমন মতামত উঠে আসে।
ইডকল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর মোর্শেদ বলেন, আমরা অর্থায়ন ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে থাকি। আমরা ৪০ লাখ সোলার হোমস সিস্টেম স্থাপন করি। এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখে।
সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্লিন এনার্জির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সেখানে সৌরবিদ্যুৎ বড় একটি ভূমিকা রাখবে। বিদ্যুতের ট্যারিফ সমন্বয় হওয়ায় সৌরবিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। পাশাপাশি গার্মেন্টস সেক্টরের বায়ারদের একটি অংশ সৌরবিদ্যুতের বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। এতে করে রুফটপ সোলারের আগ্রহ বেড়েছে। তবে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে অনেকের মধ্যে। এই ধরনের আলোচনার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়বে।
দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, আমাদের প্রাইমারি এনার্জি কমে যাচ্ছে। মুদ্রার দরপতনের প্রভাব ফেলেছে। রুফটপ সোলারের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যাটারি রিসাইকেল ইন্ডাস্ট্রি শুরু করা প্রয়োজন।
মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইডকল-এর সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট মো. সিরাজুল হোসেন।
সিরাজুল হোসেন বলেন, ইডকল ৮০ মেগাওয়াট রুফটপ সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। পাইপলাইনে রয়েছে আরো ৮০ মেগাওয়াট। ৩০০ মেগাওয়াট লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। বাংলাদেশে ৩ থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াট রুফটপ সোলারের সুযোগ রয়েছে।
সৌরবিদ্যুতের খরচ অনেক কম উল্লেখ করে ইডকল-এর সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট সিরাজুল হোসেন বলেন, গ্রিড বিদ্যুতের তুলনায় সৌরবিদ্যুতের খরচ অনেক কম। নেট মিটারিং ব্যবহার করে বিদ্যুতের খরচ অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে। প্রজেক্টের ৮০ শতাংশ ঋণ দিয়ে থাকে ইডকল। ১ মেগাওয়াট প্রকল্পে প্রায় ৬ কোটি টাকা লাগে। এর মধ্যে ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা ঋণ দিয়ে থাকি, যা ১০ বছর মেয়াদে পরিশোধযোগ্য। ১ মেগাওয়াটের একটি প্রকল্প মাসে ৯৬ হাজার কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ জেনারেশন দিচ্ছে। এর দাম পড়ছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ টাকার মতো।
লাইনের বিদ্যুতের চেয়ে অনেক কম দাম। আমরা হিসাব করে দেখেছি, ২০ বছরের একটি প্রকল্পে ১৬ কোটি টাকার মতো সাশ্রয় হচ্ছে।
ইডকল-এর এসভিপি আহমেদুল হাই চৌধুরী বলেন, যদি একটি কোম্পানি ১ মেগাওয়াটের সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করে, তিনি লোডশেডিংয়ের সময় সেখান থেকে সরবরাহ পাচ্ছেন। আর যাদের সৌরবিদ্যুতের সুবিধা নেই, যদি দিনে ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়, সে সময়ে বিদ্যুৎ পেতে ডিজেল জেনারেটর ব্যবহার করেন। ৩ ঘণ্টায় ১শ লিটার ডিজেল প্রয়োজন হচ্ছে। এতে করে বছরে ৯ হাজার ১শ ৮০ টন কার্বন ইমিশন করবে ডিজেলে। সৌরবিদ্যুৎ হলে কার্বন ইমিশন কমে আসছে। রুফটপ সোলার কার্বন ইমিশন কমাতে ব্যাপকভাবে ভূমিকা রাখছে।
পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের রেক্টর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালে নেট মিটারিং গাইডলাইন প্রণয়ন করা হয়। তার আগে রুপটপ সোলারের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগে রুফটপ সোলার বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু সেটি সফল হয়েছে বলে আমি মনে করি না। নেট মিটারিংয়ে সবার সুবিধা রয়েছে কিন্তু বিতরণ কোম্পানিগুলোর কোনো সুযোগ নেই। সে কারণে তারা আগ্রহ কম দেখান। বিতরণ কোম্পানির আগ্রহ তৈরির জন্য প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন। সোলার সিস্টেম যন্ত্রপাতির ওপর প্রায় ৯০ শতাংশ ট্যাক্স বড় চ্যালেঞ্জ। ট্যাক্স কমানো গেলে দ্রুত সম্প্রসারণ সম্ভব।
স্রেডার সদস্য সিদ্দিক জুবায়ের বলেন, গুজরাটে শিল্প ও আবাসিকে ১শ শতাংশের ওপর বসাতে পারবে। কিন্তু ট্রান্সফরমারের ক্যাপাসিটির ৭০ শতাংশের ওপরে হতে পারবে না। সেচ পাম্পের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে লিমিট তুলে দেওয়া উচিত। কারণ, সকালের দিকে আলো কম থাকে। তখন বড় আকারে হলে পুরোমাত্রায় সেচ অব্যাহত রাখতে পারে। রুফটপ সোলারের বিমা পলিসি নেই। বীমা পলিসি থাকা উচিত।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) অধ্যাপক শাহরিয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরকারের প্রস্তাবিত ১শ ইকোনমিক জোন সৌরবিদ্যুতের আওতায় আনা গেলে রুফটপ থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াট জেনারেশন করার সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইউটিলিটিগুলোকে আগ্রহী করে তোলার জন্য প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন।
দৈনিক বণিক বার্তার চিফ রিপোর্টার বদরুল আলমের সঞ্চালনায় বুয়েট অধ্যাপক জিয়াউর রহমান খান, ইডকল-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাসেল আহমেদ, ব্রাইট গ্রিন এনার্জি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান দীপাল বড়ুয়া কেএফডব্লিউ ঢাকা অফিসের ডেপুটি ডিরেক্টর তাজমিলুর রহমান, বার্তা২৪.কমের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, ইডকল-এর ম্যানেজার (টেকনিক্যাল) রিয়াদ বিন শাহীদ, রাইজিং গ্রুপের ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান, সামুদা গ্রিন এনার্জির পরিতোষ মাহমুদ আলোচনায় অংশ নেন।