বিদ্যুৎ, জ্বালানি খাত মেরুদণ্ড হওয়ার কথা থাকলেও তা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিগত সরকারের ভুলনীতির কারণে। স্বাধীন গণতদন্ত কমিশন গঠন, বিশেষ বিধান আইন বাতিলসহ ১৬ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংস্কার নাগরিক প্রত্যাশা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। বাংলাদেশের পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে।
বিডব্লিউজিইডির সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মুনাফা লুটে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। অনেক আইন ও নীতিমালা করা হয়েছে বিশেষ গোষ্ঠিকে সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে। একটি কমিশন গঠন করা দরকার, এসব অসঙ্গতি তুলে আনার জন্য।
তিনি বলেন, বিশেষ বিধান আইন স্থগিত করা হয়েছে আমরা সাধুবাদ জানাই। শুধু স্থগিত নয় বাতিল করতে হবে, জাইকার তৈরি করা মাস্টারপ্ল্যান বাতিল করে। এতে নানা রকম গোঁজামিল ও ভুলত্রুটি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের সময় জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর কথা বললেও, বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ৪৯ দশমিক ৩ শতাংশ সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, বাকি ৫১ শতাংশ সময় অকার্যকর থাকে। তবুও নতুন নতুন এলএনজি ভিত্তিক গ্যাস পাওয়ার প্ল্যান্টের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে, যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এখন সময় এসেছে, এসব ব্যর্থ প্রকল্পের অনুমোদন বন্ধ করার এবং টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে মনোনিবেশ করার।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে একটি প্রভাবশালী চক্র গড়ে উঠেছিল, যা ভাঙতে হবে। অতীতে যে আইনগুলো প্রণয়ন করা হয়েছিল, সেগুলো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার জন্যই ছিল। এখন আইন ও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের কল্যাণে এবং বিজ্ঞানভিত্তিক জ্ঞানের আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক নীতি গ্রহণে দীর্ঘদিন ধরেই অনীহা দেখা গেছে। এখন সময় এসেছে সেই অনীহা থেকে বেরিয়ে এসে নীতিগত সিদ্ধান্তগুলোতে জ্ঞানকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ার।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ (সংশোধনীসহ) অবিলম্বে বাতিল। স্বাধীন গণতদন্ত কমিশন গঠন করা। প্রাথমিক পরিবেশগত নীরিক্ষা (আইইই) ও পরিবেশগত সমীক্ষা প্রতিবেদন (ইআইএ) উন্মুক্ত এবং বাধ্যতামূলক করতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ‘নো ইলেক্ট্রিসিটি নো পে’ নীতির আওতায় আনা। চুক্তি সম্পাদিত তবে নির্মাণাধীন নয়, এমন সব জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিল করতে হবে। অনুমোদিত এবং প্রস্তাবিত নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ বাতিল করা, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি কর্তৃপক্ষকে (স্রেডা) স্বতন্ত্র ডিভিশনের মর্যাদা প্রদান, নবায়নযোগ্য জ্বালানির যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানি কর ও ভ্যাট মওকুফ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা, এ খাতে দুর্নীতি দূর করা এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিরসনের লক্ষ্যে ১৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।