বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের সহায়তার গ্যাস ও এলএনজির পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। বকেয়ার কারণে এলএনজি আমদানি ব্যাহত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বার্তা২৪.কম এর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, কিছু টেকনিক্যাল কারণে এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। সামিট গ্রুপের এফএসআরইউ (ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল) ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছিল। এখন সেই সংকট দূর হয়ে গেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন ও তাল্লোর কাছে বকেয়া রয়েছে ২১৫ মিলিয়ন ডলার। আর এলএনজি আমদানি বাবদ বকেয়া রয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে বকেয়া রয়েছে ৫১৫ মিলিয়ন ডলার। সরকারের উদ্যোগে বকেয়া কমে আসছে, আগামী সপ্তাহে আরও কমে আসবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া তারা প্রতিমাসে গ্যাস দিবে, এরপর বিল প্রদান করা হয়।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যে প্রক্রিয়া শুরু করেছি, তাতে আগামী সপ্তাহে বকেয়া ৪০০ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে। পেট্রোবাংলার টাকার কোনো সমস্যা নাই। পেট্রোবাংলা, জ্বালানি উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন ও সমন্বয় করছেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সামিটের এফএসআরইউ ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েকদিন আগে সেটি অপারেশনে এসেছে। কাতারের সঙ্গে আলোচনা করে এক কার্গো এলএনজি আমদানি এগিয়ে আনা হয়েছে। যে কার্গোটি ডিসেম্বরে আসার কথা ছিল, আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কাতার সেটি ২০ তারিখে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এতে করে সেপ্টেম্বর জুড়ে আমাদের সরবরাহ চেইনে কোনো সংকট হচ্ছে না। আমরা মাস জুড়ে দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন করে এলএনজি সরবরাহ দিতে পারবো।
ডিসেম্বরের কার্গো এগিয়ে আনলে ওই সময়ে গিয়ে কোন সংকট তৈরি করবে কি না। এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা কিছুটা সময় হাতে পেলাম, এখন ডিসেম্বরে স্পর্ট মার্কেট থেকে কিনতে পারবো। সময় পেলাম এই সময়ে প্রস্তুতি নিতে পারবো।
দেশে গ্যাস সংকটের জন্য অনুসন্ধান স্থবিরতাকেই দায়ী করে আসছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। পেট্রোবাংলার কয়েক দশকের ঢিলেমির কারণে সমালোচনায় মুখর ছিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তবে সেইদিন এখন বদলে যেতে শুরু করেছে। পেট্রোবাংলার খোলনচে বদলে গেছে বর্তমান চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারের সময়ে। একদিকে যেমন গতিময় হয়েছে, অন্যদিকে নতুন মাত্রাও যুক্ত হয়েছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে।
কখনও লোকবল সংকট, কখনও আবার পরিকল্পনার অভাবে বাপেক্সের রিগগুলো বেকার পড়ে থাকতো। কিন্তু কয়েক মাস ধরে ৫টি রিগেই ব্যস্ত সময় পার করছে। একটি কাজ শেষ না করতেই আরেকটি কাজের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। পাশাপাশি আরও একটি রিগ কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান বলেছেন, রিগগুলোর কাজের চেইন তৈরি করা হয়েছে। কোনোটিই আর বেকার বসে থাকবে না। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপে কোনটি রিগ কোথায় যাবে তারও শিডিউল প্রস্তুত করা হয়েছে।
এতোদিন যে লোকবল সংকটের কথা বলে রিগগুলো বসিয়ে রাখা হতো, সেই সংকট দূর হলো কীভাবে। এমন প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা আমাদের নিজস্ব লোকবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। পাশাপাশি কিছু লোক আউটসোর্সিং করেছি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিতে সচেষ্ট রয়েছি। আমরা ২০২৮ সাল পর্যন্ত কি কাজ করবো তার একটি শিডিউল তৈরি করেছি। চলমান ৪৮ কূপ খনন প্রকল্পের জন্য নতুন করে আরও ১০০ কূপ খনন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ২০২৬ সালে যে তহবিল লাগবে এখনই চিঠি চালাচালি শুরু করেছি।
তিনি বলেন, ১০০ কূপ খনন প্রকল্পে ২০২৬ সাল থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হবে। এতে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। সরকারের কাছে প্রত্যেক বছরে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা করে অর্থায়ন চাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডে ১১২ বছরে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে কমবেশি ৯৯টি। আর আগামী ৩ বছরে ৬৯টি কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েছে পেট্রোবাংলা। একে অনেকে উচ্চাভিলাষী মনে করলেও খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, ১০টি কূপ খনন করে ১টিতে গ্যাস পাওয়া গেলে অর্থনৈতিকভাবে সফল মনে করা হয়। সেখানে বাংলাদেশে ৩টি অনুসন্ধান কূপ খনন করলে একটি গ্যাস পাওয়া যায়। তারপরও বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে যেভাবে কাজ হয়নি। যে কারণে আজকের এই সংকট।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমাদের দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর মজুদ কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমে যাচ্ছে। আমরা যদি বর্তমান উৎপাদন ক্ষমতা ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট ধরে রাখতে চাই তাহলে বছরে কমপক্ষে ১০ অনুসন্ধান কূপ খনন করতে হবে।