জেট ফুয়েলের প্রাইসিং ফর্মূলা নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কোন পক্ষ আবেদন নিয়ে এলে গণশুনানির মাধ্যমে দর নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।
বিইআরসি চেয়ারম্যান বার্তা২৪.কমকে আরও বলেছেন, এতোদিন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে দর নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ওই প্রতিষ্ঠানের দুইজন কর্মকর্তাকে ডেকে তাদের ফর্মূলা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের কর্মকর্তারাও বিপিসিতে যাবে বিষয়টি দেখার জন্য।
উড়োজাহাজের জ্বালানি হিসাবে খ্যাত জেট ফুয়েল এতোদিন নির্বাহী বিভাগ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দাম নির্ধারিত হয়েছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এক আদেশ বিইআরসিকে দর নির্ধারণের কথা বলা হয়। ওই আদেশে বলা হয় অক্টোবর থেকে জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করবে বিইআরসি, তারপর থেকেই বিষয়টি সামনে এসেছে।
অন্তবর্তীকালীণ সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান প্রথম দিন অফিসে এসেই বলেছিলেন, নির্বাহী আদেশে আর বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হবে না। তিনি সেই কথা রেখেছেন, ইতোমধ্যেই নির্বাহী আদেশে দাম সমন্বয় করার ধারা বাতিল করে দিয়েছেন। কিন্তু প্রবিধানমালা না থাকায় বেশ খানিকটা অস্বস্তিতে রয়েছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন।
২০০৩ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন পাশের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও আধাবিচারিক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিইআরসি গঠন করা হয়। গ্যাস ও বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা এবং ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত বিইআরসি মূলত ২০০৯ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। এ পর্যন্ত ১৩টি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আরও ১২টি প্রবিধানমালা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে মন্ত্রণালয়।
আইনে সকল ধরণের জ্বালানির দাম নির্ধারণের এখতিয়ার দেওয়া হলেও প্রবিধানমালা ঝুলে থাকায় শুধুমাত্র গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে আসছিল বিইআরসি। ২০২৩ সালে হঠাৎ করেই আইন সংশোধন করে নির্বাহী আদেশে দাম সমন্বয় (কম/বেশি) করার বিধান যুক্ত করা হয়। তারপর থেকে নির্বাহী আদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করায় কার্যত বেকার হয়ে পড়ে রেগুলেটরি কমিশন।
বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে দাম চুড়ান্ত করায় ইউটিলিটিগুলোর নানা রকম অসঙ্গতি সামনে আসতো। এতে করে তাদের উপর এক ধরণের চাপ তৈরি হয়, দিনে দিনে একটি কালচারে পরিণত হতে যাচ্ছিল। সেই প্রক্রিয়াকে গলাটিপে হত্যা করে আওয়ামী লীগ সরকার। তবে অন্তবর্তীকালীন সরকার (২৭ আগস্ট) নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের আইন বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের একক ক্ষমতা ফিরে পেয়েছে বিইআরসি।
তবে পেট্রোলিয়ামের বিধিমালা অনুমোদন না হওয়ায় ধুয়া তুলে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারিত হয়ে আসছে। গত মাসেও ডিজেল, পেট্রোল, অকটেনের দাম সমন্বয় করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। আইনে বলা হয়েছে সকল ধরণের এনার্জির মূল্য নির্ধারণ করবে বিইআরসি। ৩৪(৩) ধারায় বলা হয়েছে বিইআরসি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করবে। তবে শর্ত থাকে যে, প্রবিধানমালা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত সরকার প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারণ করতে পারবে। প্রবিধানমালা ঝুলে থাকায় বিইআরসি জ্বালানি তেলের বিষয়ে কিছুই করতে পারেনি।
বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমি যোগদানের আগে থেকেই প্রবিধানমালা মন্ত্রণালয়ে জমা রয়েছে। আমি যোগদানের পর এগুলো অনুমোদনের বিষয়ে জোর দিচ্ছি। তবে জ্বালানি তেলের পৃথক তিনটি প্রবিধানমালা (বিতরণ, সঞ্চালন ও খুচরা বিক্রয়) না করে একত্রে করার বিষয়টি সামনে এসেছে। আমরা ৩টি একত্রে করে পাঠিয়ে দিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই অনুমোদন পাওয়া যাবে।
বিইআরসির সচিব ব্যারিস্টার খলিলুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আইনগতভাবে বিইআরসি কর্তৃক জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণে কোন বাধা নেই। আর নির্বাহী বিভাগ যেহেতু বলেছে তখনতো আর কথা থাকে না।
প্রবিধানমালা না থাকা কোন সংকট হবে কি-না। এমন প্রশ্নের জবাবে বিইআরসি সচিব বলেন, আইনে বলা হয়েছে নজীর থাকলে করতে পারবো। বিধিমালা অনুমোদন হওয়ার আগে থেকেই গ্যাসের দাম নির্ধারণ করছে বিইআরসি, পরে বিধিমালা অনুমোদিত হয়েছে। আবার এলপিজির বিধিমালা চুড়ান্ত না হলেও কোর্টের আদেশে ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে এলপিজির দর ঘোষণা করা হচ্ছে। প্রতি মাসেই আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দর ঘোষণা করা হচ্ছে।
এলপিজির দরের প্রসঙ্গ সামনে এসেছিল ক্যাবের একটি রিটের মাধ্যমে। সংক্ষুব্ধ ক্যাব রিটে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিইআরসিকে বিবাদী করা হয়। কোর্টের শোকজের জবাবে বিইআরসি তখন বলেছিল প্রবিধানমালা না থাকায় তারা করতে পারছে না। জবাব গ্রহণ না করে কোর্ট অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করা হয় বিইআরসিকে। এরপর বাধ্য হয়ে এলপিজির দর নির্ধারণ শুরু করে বিইআরসি।
ক্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, প্রবিধানমালা ছাড়াই বিইআরসি জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করতে পারবে। তারা ২০১২ সালে যে খসড়া প্রবিধানমালা রেডি করেছে তার আলোকে করতে পারে। সেখানে যেসব নিয়মনীতি অনুস্মরণের কথা বলা আছে সেগুলো আলোকে করবে। তাদেরতো এলপিজি প্রবিধানমালা অনুমোদন হয় নি, এলপিজির দর ঘোষণা করতে যেহেতু সমস্যা হচ্ছে না এখানেও কোন সমস্যা হবে না।