বাজারত সউক কিছুরই দাম বেশি। ডিমের দাম যদি আকাশ সমান হয় হামরা গরিব মানুষ খামু কি? আকালি থাকি, সউক কিছু কিনবার বাদে ট্যাকা আটে না। শহরোত যে ভীড় এলা দেকি সারা দিন ইকশা চালেয় কামাই করি ডিম-ভাত খাওয়াও হবার ন্যায়। এক হালি ডিম কিনতে ৫৮ ট্যাকা নাগে, আরোতো বেবাক খরচ বাকি থাকে। গরিব মাইনষের দুঃখ দেক্যারও কাইও নাই, এইল্লা কতা কয়ায় লাব নাই। চড়া দামে ডিম কিনতে আসা রিকশাচালক রনজিন ঘোষ এভাবেই আঞ্চলিক ভাষায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
রংপুর সিটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হালিপ্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ৫৫ টাকা দরে। খুচরা দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ৫৭-৫৮ টাকা দরে। সেই সাথে দেশি ও হাঁসের ডিমের দামও বাড়তি। এই পরিস্থিতিতে হিমশিম খাচ্ছেন খুচরা ক্রেতাদের সাথে পাইকারি দোকানদাররাও। ডিমের রেকর্ড পরিমাণ দামে বাজারে বিরাজ করছে অস্থিরতা।
গঙ্গাচড়া থেকে সিটি বাজারে ডিম কিনতে আসা ক্রেতা আশরাফুল ইসলাম বলেন, এখান থাকি পাইকারি ডিম কিনি গ্রামে বিক্রি করি কিছু টাকা লাভে। যদি এখানেই কিনতে হয় পাইকারি ৫৫ টাকা বেচামু কত? ৫৭-৫৮ টাকা হালিতে ক্রেতারা ডিম কিনতে চায় না। ডিম গরিব মানুষের খাওয়ার প্রথম তালিকার কিন্তু প্রায় ৬০ টাকা হালি হইলে কি খাবে মানুষ। দাম কমলে আমাদেরও বিক্রি ভালো হয়।
রংপুর সিটি বাজারের ডিম ব্যবসায়ী জাদু মিয়া বলেন, হাসিনা গেইচে, সউক ধোঁয়াই গেইচে। এলাতো ডিমের বাজারে সিন্ডিকেট নাই, তাইলে বাজারে ডিমের দাম কমে না কেন। যে জিনিসের দাম যত বাড়ে ক্রেতারা আরও বেশি করি খায়। ডিমের আমদানি নাই, চাহিদা বেশি তাই ডিমের দাম কমে না। ফার্মে ডিম যে পরিমাণ উৎপাদন হচ্ছে আমাদের চাহিদা বেশি হওয়ায় দিতে পারতেছে না। যেখানে ৪ হাজার ডিম লাগে সেখানে দিচ্ছে ১৬০০ ডিম তাহলে বাজারে ডিমের চাহিদা পূরণ হয় কেমন করি। এইজনতে ডিমের দাম বেশি।
লাগামহীন ডিমের দাম নিয়ে খামারী রাজা মিয়া বলেন, এখন চারিদিকে পানি। সবজির দাম বেশি, তাই মানুষ ডিম দিয়ে তরকারির চাহিদা বাড়িয়েছে। ডিমের আমদানি কম, ফিডের দাম বেশি, মুরগির বাচ্চার দাম বেশি সবমিলিয়ে ডিমের দাম বেশি। একেকটি মুরগীর বাচ্চা আগে কিনতাম ২০ টাকা এখন ১০০ টাকা। প্রতিপিস ডিমে খরচ পড়ে ১১ টাকার ওপরে, তাহলে আমরা বিক্রি করবো কত? বাজারে চাহিদার তুলনায় আমরা ডিম দিতে পারছি না, সিন্ডিকেট হয় কেমনে। কিছুদিন আগে মাত্রাতিরিক্ত গরমে অনেক মুরগি মারা গেছে, এখন মুরগি তুলনামূলক আমদানি কম। নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ অল্প টাকার মধ্যে ডিম দিয়ে তরকারির অভাব মেটাতে ডিমের দিকে ঝুঁকছে তাই চাহিদাও বাড়ছে। ধান কাটামারি হলে গ্রামে দেশি মুরগি ও হাঁস ডিম দেবে তখন ঘাটতি কিছুটা পূরণ হবে দামও কমে আসবে।