"রাষ্ট্রের প্রয়োজনে নয়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র হয়েছে সামিটের চাওয়ায়" শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে সামিট গ্রুপ।
সামিট গ্রুপ বলেছে, ২০১১ সালে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) আইপিপি ভিত্তিতে যথাক্রমে শান্তাহার (৫২ মেগাওয়াট) এবং সৈয়দপুরে (১০০ মেগাওয়াট) দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের আহ্বান করে। দাখিলকৃত প্রস্তাবের প্রাক যোগ্যতা বাছাই এবং দরপ্রস্তাব মূল্যায়নের ভিত্তিতে যোগ্য সর্বনিম্ন দরদাতা হিসাবে পহেলা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ তারিখে বিউবো সামিট গ্রুপের অনুকূলে লেটার অব ইন্টেন্ট (এলওআই) প্রদান করে। এই দরপত্র অনুযায়ী, প্রকল্প দুটিই বিউবোর নিজস্ব জমিতে নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। তৎকালীন সময়ে জ্বালানি তেল আমদানি ও সরবরাহের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান, বিপিসির খুলনা ডিপো থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটিতে জ্বালানি তেল (HFO) সরবরাহের কথা ছিল যা যথাক্রমে সৈয়দপুর থেকে প্রায় ৪৩০ কিলোমিটার এবং শান্তাহার থেকে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শর্তানুযায়ী সৈয়দপুর এবং শান্তাহার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন হলে দৈনিক যথাক্রমে ৪০০ টন এবং ২০০ টন জ্বালানি তেলের প্রয়োজন হতো।
উক্ত সময়ে বিউবোর অনুমোদনক্রমে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিভিন্ন জেলায় আটটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছিল, যার জন্য প্রতিদিন ৩,১৫০ টন জ্বালানি তেল বিপিসির খুলনা ডিপো থেকে রেলপথের মাধ্যমে সরবরাহ করার দরকার হতো। জ্বালানি তেল বহন করতে প্রতিদিন ২৪০টি রেল ওয়াগন এবং সেজন্য ১০টি রেল ইঞ্জিনের প্রয়োজন ছিল। এই বিষয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং বিউবোর অভ্যন্তরীণ সমন্বয় নিয়ে বিলম্ব হতে থাকে। এই সিদ্ধান্তহীনতার জন্য সামিটের প্রকল্প দুটির বাস্তবায়ন শুরু হতে দেরি হয়।
সামিট দাবি করেছে, ইতিমধ্যে বরিশাল এলাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব জমিতে ৫০ মেগাওয়াটের একটি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যর্থ হলে উক্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয়। তখন বিউবোর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সৈয়দপুরে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিবর্তে, জ্বালানী তেল সরবরাহের সুবিধা বিবেচনায় বরিশালের রুপাতলীতে কীর্তনখোলা নদীর তীরে, সামিট নিজস্ব জমিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য রাজি হয়। সামিট বরিশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গত ৫ এপ্রিল ২০১৬ তারিখ থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের জাতীয় বিদ্যুৎ সপ্তাহে সামিট বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে “সেরা বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট -তরল জ্বালানি ভিত্তিক” ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়।
উক্ত সময়ে, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ এলাকায় বিউবোর পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর নির্মাণ সমাপ্ত না হওয়ায়, সেখানেও বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। তাই বিউবো পূর্বপরিকল্পিত শান্তাহারের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্পটির স্থান পরিবর্তন করে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে মদনগঞ্জে সামিটের নিজ ক্রয়কৃত জমিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করার নির্দেশ দেয়। সামিট নারায়ণগঞ্জ-২ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখ থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছে।
সামিট বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চায়, সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জ্বালানি সরবরাহের খরচের সূচক সবসময়ই সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এবং চুক্তির বর্ণনা অনুযায়ী করা হয়। এ ক্ষেত্রে, নির্ধারিত জ্বালানি পরিবহন খরচের বিষয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর আলাদা করে বিবেচনা করার কোনো সুযোগ থাকে না।
সামিট গ্রুপ বলেছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অতি প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের লক্ষ্যে সামিট সর্বদা কর্পোরেট সুশাসন নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আশা করছি, আপনাদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে যেন কোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার না হয় সে ব্যাপারে আপনারা যত্নবান হবেন। কারণ, কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য সামগ্রিকভাবে সামিটের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে পারে এবং জনমনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য
সামিট গ্রুপ প্রতিবাদ লিপিতে উল্লেখ করেছে পিডিবির সিদ্ধান্তহীনতায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিলম্বিত হয়। এখানে প্রকৃত সত্য গোপন করার চেষ্টা করেছে সামিট গ্রুপ। পিডিবি কয়েক দফায় তাগাদাপত্র দেয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দ্রুত নির্মাণের জন্য। এরপর কাজ না হলে চুক্তি বাতিল ও জামানত ১২ লাখ ডলার বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পিডিবির সিদ্ধান্তহীনতায় হলে তারা জামানত বাজেয়াপ্ত করার সাহস দেখাতো না। এখানেই বিষয়টি অনেকটা পরিষ্কার হয়, ভেতরে আসলে কি ঘটেছে।
উত্তরাঞ্চলে তখন ভয়াবহ লোডশেডিং হতো, সে কারণে মাস্টারপ্লানে উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র দু’টি স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সামিট তাদের প্রতিবাদে বরিশাল বিদ্যুতের ঘাটতি টেনে আনলেও উত্তরাঞ্চলের অবস্থা কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।
রংপুর থেকে স্থান পরিবর্তন করে সারপ্লাস বিদ্যুৎ উৎপাদন এলাকা মদনগঞ্জে নেওয়া হয় শুধু সামিটের চাওয়া পূরণ করতে। দু’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের কি পরিণতি ছিল সেই সময়ে পত্রিকার পাতা দেখলেই অনুমেয় হবে। পিডিবির লোকজনও বিষয়টি অনুধাবন করেছিলেন, কিন্তু তারা ছিল অসহায়।
মাস্টারপ্ল্যানে থাকা দু’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এক অঞ্চল থেকে কখন অন্য অঞ্চলে চলে যায় বিষয়টি পাঠকের কাছে পরিষ্কার। আর সামিটের দৌরাত্ম্য কতটা ছিল তা কারোরই অজানা নয়। অতীতেও তাদের দুর্নীতি ও অনিয়ম বার্তা২৪.কম লিখেছে, ভবিষ্যতেও তুলে ধরার প্রয়াস অব্যাহত রাখবে।
প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অতি প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের লক্ষ্যে সামিট সর্বদা কর্পোরেট সুশাসন নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এক দশক আগেও যেখানে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ আড়াই টাকার মতো ছিল, সেই বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ এখন ১০ টাকার উপরে। যে কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে নাভিশ্বাস উঠেছে রাষ্ট্রের।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ খাতে ব্যবসা করে কয়েক বছরে সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত রাষ্ট্রে শীর্ষ ধনীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন আজিজ খান। এতেই বুঝা যায় বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে নাকি সামিট গ্রুপের তথা আজিজ খানের উন্নয়ন হয়েছে।