দেশের শীর্ষ ঋণখেলাপিদের মধ্যে অন্যতম সালমান এফ রহমান। দেশের প্রথমদিকের শিল্প গ্রুপ বেক্সিমকোর মালিক ও আওয়ামী সরকারের সাবেক বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা হওয়ার সুবাদে তার ছিলো দোর্দণ্ড ক্ষমতা। আর এই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সরকারি মহলের বিভিন্ন মন্ত্রী, ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের সহায়তায় দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দেশের সরকারি-বেসরকারি সাত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন মোট ৪১ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি বেক্সিমকো গ্রুপের ১৭টি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিসহ নামে-বেনামে নানা কোম্পানির নাম ব্যবহার করেছেন। কিন্তু এসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি লাভবান হলেও ঋণ পরিশোধে ছিলেন অনিয়মিত। ফলে এক পর্যায়ে তার প্রতিটি ঋণই মেয়াদোত্তীর্ণ ও খেলাপি হয়ে পড়েছে।
তবে প্রকৃতপক্ষে তার ঋণের সঠিক পরিমাণ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অনানুষ্ঠানিক সূত্রে জানা যায়, ঋণ নেওয়া সাত ব্যাংকের মধ্যে ৪টি-ই সরকারি ব্যাংক থেকে নেওয়া। এসব থেকে নিয়েছেন মোট ঋণের অর্ধেকেরও বেশি। আর বাকি তিনটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে নেয়া।
এর মধ্যে সরকারি ব্যাংক জনতা থেকে নিয়েছেন ২৩ হাজার কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংকে ১ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকে ১ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা ও রূপালী ব্যাংক থেকে নিয়েছেন ৯৬৫ কোটি টাকা। আর বাকি তিন বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকে ২ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংকে ১১ হাজার কোটি টাকা এবং এবি ব্যাংক থেকে নেওয়া তার ঋণের পরিমাণ ছিলো ৬০৫ কোটি টাকা।
তবে এর বাইরেও বেসরকারি প্রাইম, শাহজালাল ইসলামী ও সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে তিনি ঋণ নিলেও সেটার পরিমাণ জানা যায়নি।
এসব বিষয় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেননি।
'শুধু জনতা ব্যাংক থেকেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ায় বর্তমানে ব্যাংকটি তারল্যসংকটে ভুগছে। এতে গ্রাহক সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে একক গ্রাহক ঋণসীমা মানা হয়নি।'- জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা।
জানা যায়, বেক্সিমকো গ্রুপের ১৭টি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি থাকা সত্ত্বেও সেগুলোসহ নামে-বেনামে নানা কোম্পানির জন্য তিনি ঋণ করেছেন। তার এই অস্বাভাবিক ঋণ এবং ঋণ পরিশোধ না করার বিষয়গুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরই বিভিন্ন মহলের মানুষ কথা বলতে শুরু করেন। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শুরু করে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এসবের বিররুদ্ধে কথা না বলায় তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
২০১০ সালে সালমান রাতারাতি আইএফআইসি ব্যাংক দখলে নেন। এরপর নানা প্রতিষ্ঠানের নামে যে ঋণ নেন তার পরিমাণ প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। অগ্রণী ব্যাংকে বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও বেক্সিমকো কমিউনিকেশন লিমিটেডের ঋণ দাঁড়িয়েছে মোট ১ হাজার ৪০৯ কোটি। ন্যাশনাল ব্যাংকে বেক্সিমকোর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্লুম সাকসেস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ৮৩৬ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকটিতে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ ৮২৩ কোটি টাকা এবং বেক্সিমকো এলপিজির ঋণ ১ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা রয়েছে। বেসরকারি এবি ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ রয়েছে ৬০০ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলটির অনেক নেতাই আত্মোগপনে চলে গেলেও তিনি যেতে পারেননি। ওই মাসেরই ১৩ তারিখ তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। এরপর তাকে দফায় দফায় রিমান্ড নেওয়া হয়।