লাফিয়ে দাম বাড়া ৩০ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে ডিএসই

পুঁজিবাজার, অর্থনীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 19:37:36

দুর্বল মৌলভিত্তি, ‘জেড’ ক্যাটগরির অন্তর্ভুক্ত ও ব্যবসায়ীক কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও লাফিয়ে লাফিয়ে শেয়ারে দাম বৃদ্ধি পাওয়া স্বল্প মূলধনী ৩০ কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের কথা চিন্তা করে এ উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক অবস্থায় কারসাজি চক্রের দখলে থাকা কোম্পানিগুলোর বাস্তবচিত্র খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে ডিএসই।

ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের আলোকে সম্প্রতি কমিশনের কাছে আবেদন করেছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ। প্রকৃত তথ্য জানার পরে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ডিএসই। এর মধ্যে ৩০টি কোম্পানির মধ্যে চারটি কোম্পানিকে ডিএসই থেকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে।

কোম্পানিগুলো হচ্ছ-মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ট লিমিটেড, ইমাম বাটন ও সাভার রিফ্রেক্টরিজ,আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, দুলামিয়া কটন, সমতা লেদার, শ্যামপুর সুগার মিলস, জিল বাংলা সুগার মিলস, কে অ্যান্ড কিউ(বাংলাদেশ), বেক্সিমকো সিনথেটিক্স, জুট স্পিনার্স, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, ইনফর্মেশন সার্ভিসেস নেটাওয়ার্কর্স লিমিটেড।

এছাড়াও রয়েছে- বাংলাদেশ ওয়েল্ডেং ইলেক্ট্রোডস, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, বাংলাদেশ অটোকার্স, এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, বিচ হ্যাচারী, দ্যা ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাচারিং কোম্পানি, হাক্কানী পাল অ্যান্ড প্যাকেজিং, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং, স্ট্যান্ডর্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ, তাল্লু স্পিনিং মিলস, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, লিগেসি ফুটওয়্যার, ‍মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্টিজ, মুন্নু জুট স্ট্যাফলার, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল ও তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইয়িং লিমিটেড।

এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীর স্বার্থে দুর্বল মৌলভিত্তি সম্পন্ন এবং স্বল্প মূলধনী এ রকম ৩০টি কোম্পানির বাস্তব অবস্থা জানতে কমিশনের কাছে অনুমোদন চেয়েছি। কমিশন অনুমোদন দিলে ডিএসইর পরিদর্শন টিম কোম্পানিগুলোর পারফম্যান্স খতিয়ে দেখবে।‘

তিনি বলেন, ‘বন্ধ থাকার পর কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম কেন বাড়ে, কোম্পানির সম্পদ আছে কিনা সব তথ্য তুলে ধরবে পরিদর্শন টিম।’

‘এরপর আমরা কোম্পানির অবস্থা কমিশনের কাছে তুলে ধরবো। আশার করছি, কমিশন বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে দ্রুত পরির্দশনের অনুমতি দেবেন।’

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের প্রাইমারি অথিরিটি হিসেবে ডিএসই ও সিএসইর পরিদর্শনের সুযোগ না থাকায় কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছা মত তথ্য দিচ্ছে। মার্কেটে গুজব ছড়াচ্ছে, গুজবে কান দিয়ে বিনিয়োগকারীরা ঠকছে। আর কারসাজি চক্রের যোগসাজসে কোম্পানির লোকেরা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কমিশনের উচিৎ কোম্পানিগুলোতে নিজেদের পরিদর্শন করা। পাশাপাশি দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে পরিদর্শনের অনুমোদন দেওয়া। তাতে গুজব ও ম্যানিপুলেশন কিছুটা কমবে বলে মনে করেন তারা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা এবি আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আইপিও অনুমোদনে দীর্ঘ সূত্রতায় ভাল কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসছে না। ফলে প্রতিয়তই অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও স্বল্প মুলধনী কোম্পানি বাজারে আসছে।’

‘নতুন নতুন আসা এসব কোম্পানি বছর দুয়েক পর থেকে লোকসানে যাচ্ছে। কোম্পানিগুলো নিয়মিত এজিএম করছে না। কোম্পানির ব্যবসায়িক অবস্থাও জানা যাচ্ছে না। এসব কোম্পানির বাস্তব অবস্থা জানার জন্য কোম্পানি ভিজিট করতে হবে, তার কোনো বিকল্প নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমার সময় তো ডিএসইর ও সিএসইর কর্তৃপক্ষ যে কোনো সময় কোম্পানি পরিদর্শন করতে পারতো। তাতে কোনো বাধা ছিল না।’ 

সূত্র মতে, ৩০টি কোম্পানির মধ্যে কমিশন পারফমেন্স করছে না এ রকম পাঁচটি কোম্পানিতে পরিদর্শন চালাতে অনুমতি দিয়েছে। তার মধ্যে চারটি কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি।

সর্বশেষ পাঁচ বছর ধরে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করছে না এবং বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলো অদূর ভবিষতে ব্যবসা চালু হচ্ছে এ রকম চারটি কোম্পানিকে পুঁজিবাজার থেকে তালিকাচ্যুত করেছে। কমিশন বাকি কোম্পানিগুলোতে পরিদর্শনের জন্য অনুমতি দিলে ডিএসই অ্যাকশনে যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর