৩০ বিমার পকেটে গ্রাহকদের ১৪০০ কোটি টাকা

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 08:16:50

মাত্র নয় মাসের মাঝে গ্রাহকদের কষ্টে উপার্জিত ১ হাজার ৪১৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা চলে গেছে বেসরকারি ৩০টি জীবন বিমা (লাইফ ইন্স্যুরেন্স) কোম্পানির পকেটে।

২০১৮ সালের প্রথম তিন প্রান্তিক অর্থাৎ জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মাঝে দ্বিতীয় বর্ষ ও তৃতীয় কিংবা তারপরের বছর মিলে ১৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫১৫টি তামাদি বিমার টাকা এগুলো। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বিমা কোম্পানির এই অবস্থানকে ‘অত্যন্ত হতাশাব্যাঞ্জক’ উল্লেখ্য করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেশিরভাগ পলিসিরই প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম দেওয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষে তামাদি হয়ে গেছে।

বিমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম পলিসি নেওয়ার পর এজেন্টরা আর গ্রাহকদের কাছে যাচ্ছেন না। তারা প্রথম বর্ষের কমিশন নিয়েই নতুন পলিসি খুঁজে বের করছেন। ফলে এজেন্টরা পুরনো পলিসি হোল্ডারদের কাছে যাচ্ছেন না। কারণ পরবর্তীতে এ কমিশন তারা কম পাচ্ছেন।

পলিসিটি হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোম্পানির পক্ষ থেকে এজেন্টদের তদারকি করা হচ্ছে না। ফলে নির্দিষ্ট সময় পর পলিসিগুলো তামাদি হয়ে যাচ্ছে। তাতে বিমা কোম্পানির পকেটে বছরের পর বছর যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থা থেকে উত্তোলনে প্রয়োজন গ্রাহকদের সচেতনতা বৃদ্ধি, এমনটাই মনে করে সংশ্লিষ্টরা।

আইডিআরএ এর প্রতিবেদন অনুসারে, বিদায়ী বছরের ৯ মাসে গ্রাহকদের সবচেয়ে বেশি টাকার তামাদি বিমা হয়েছে প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডে। প্রতিষ্ঠানটি তিন প্রান্তিকে ২ লাখ ১ হাজার ৬৮৩টি তামাদি পলিসির ২১২কোটি ২১ লাখ টাকা হজম করেছে। এ টাকা আর কোনো দিন গ্রাহকরা ফিরে পাবেন না।

এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থান রয়েছে প্রাইম ইসলামী লাইফ। একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ২ লাখ ২৯ হাজার ৩৩টি পলিসি বাবদ ১৮০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা খেয়ে ফেলেছে।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি মেটলাইফ। কোম্পানিটি ৬১ হাজার ৫৪৮টি পলিসি থেকে গ্রাহকদের ১৪৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা নিয়ে নিয়েছে।

 এ তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। কোম্পানিটি ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪৬টি তামাদি পলিসি থেকে ১৪৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা গ্রাহকদের নেই হয়ে গিয়েছে।

এছাড়াও হোমল্যান্ড লাইফ ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮২৫টি পলিসি থেকে ১২১ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং রুপালী লাইফ ২ লাখ ৪২ হাজার ৭০৬টি পলিসির ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা নেই হয়েছে। ফলে কোম্পানি দুটো যথাক্রমে ৫ ও ৬ স্থান দখল করেছে।

বাকি কোম্পানিগুলোর মধ্যে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের ১ লাখ ৫৮হাজার ৪৪টি পলিসি থেকে ৮০ কোটি টাকা, পপুলার লাইফের ৭৬ হাজার ৮৫২টি পলিসির ৬৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা, সন্ধানী লাইফের ৫০ হাজার ৩৪৮ টি বিমার ৬২ কোটি ২৯ লাখ টাকা, পদ্মা ইসলামী লাইফের ২৭ হাজার ৫২৬টি বিমার ৪৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা, সানফ্লাওয়ারের ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৮৫টি বিমার ৪৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা গ্রাহকরা ফিরে পাবেন না।

ডেলটা লাইফের ১ লাখ ৩০ হাজার ৩১৭টির ৪৩ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, প্রগতি লাইফের ৫৩ হাজার ৮১টি বিমার ৩৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা, মেঘনা লাইফের ২২ হাজার ২১৩টির ২০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, সানলাইফের ২৮ হাজার ৩৬৮টির ২০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা নেই হয়ে গিয়েছে।

জেনিথ ইসলামী লাইফের ১১ হাজার ২০৫টির ১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, ডায়মন্ড লাইফের ১৫ হাজার ৪০০টির ১৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, প্রটেক্টিভ ইসলামী লাইফের ১১ হাজার ৭৬১টি পলিসির ১১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, বায়রা লাইফের ৮ হাজার ৭২২টির ৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা, গোল্ডেন লাইফের ৯ হাজার ৭৭টির বিমার ৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা, ট্রাষ্ট ইসলামী লাইফের ৫ হাজার ৭৫৪টির ৫ কোটি টাকা গ্রাহকদের নেই হয়েছে।

এ ছাড়াও এনআরবি গ্লোবালের ২ হাজার ৭৯২টি বিমার ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফের ৩ লাখ ৪৫টি বিমার ৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, যমুনা লাইফের ৩ হাজার ২০৭টি বিমার ৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা, আলফা ইসলামী লাইফের ৬৯৪টি বিমার ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, বেষ্ট লাইফের ২ হাজার ৩৬৬টি বিমার ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, সোনালী লাইফের ১ হাজার ৮৫০টির বিমার ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, স্বদেশ লাইফের ১ হাজার ৮৬১টি বিমার ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, গার্ডিয়ান লাইফের ৪৫৩টি বিমার ৪১ লাখ টাকা এবং চ্যাটার্ড লাইফের ৪৪৪টি বিমার ৬ লাখ টাকা, সব মিলে ১৮ লাখ ৪৬ লাখ বিমার ১৪১৩ কোটি টাকা গ্রাহকদের নেই।

সার্বিক বিষয়ে আইডিআরএ সদস্য গকুল চাঁদ দাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিমা কোম্পানির তামাদি পলিসি নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি। বিমা সেক্টরকে আস্থায় ফেরাতে তামাদি পলিসির সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। এটি নিয়ে কাজ করছি’।

এ সম্পর্কিত আরও খবর