দরপতনের মাস ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসি ও বিদেশিরা শেয়ার বিক্রির চেয়ে কিনেছেন দ্বিগুণেরও বেশি। এর ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (ভোট) পর চলতি বছরের প্রথম দু’মাসে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রির চেয়ে কিনলেন বেশি।
ফলে বিদেশিদের প্রকৃত বিনিয়োগও বেড়েছে দ্বিগুণ। ফেব্রুয়ারি মাসে বিদেশিদের প্রকৃত বিনিয়োগ হয়েছে ২৪৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। এর আগের মাসে বিদেশের প্রকৃত বিনিয়োগ হয়েছিল ১৭৫ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৩৫ টাকা। তবে তার আগে টানা তিনমাস শেয়ার বিক্রি করেছিল বিদেশিরা।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে পুঁজিবাজারে ১৮ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১০ কার্যদিবস সূচক কমেছে এবং ৮ কার্যদিবস সূচক বেড়েছে।
তাতে বিনিয়োগকারীদের মোট ১৩ হাজার ৭৭৯ কোটি ১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। যার দৈনিক গড় ৭৬৫ কোটি ৫০ লাখ ৮ হাজার টাকা।এই দরপতনের মাসে বিদেশিরা মাত্র ৬৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার কেনা–বেচা করেছেন।
এর আগের মাস জানুয়ারিতে তাদের লেনদেনের পরিমাণ ছিলো ৮১৫ কোটি টাকা। অবশ্য জানুয়ারি মাসে ২৩ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল। সে জন্য বিদেশিদের লেনদেনে কিছুটা কম হয়েছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তবে তার আগের মাস ডিসেম্বরে লেনদেন হয়েছিল ৫৯৩ কোটি টাকা।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনে রকম রাজনৈতিক সংঘাত ছাড়াই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার পাশাপাশি নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সুষ্ঠুভাবে দেশে চলতে থাকায়। বিদেশিরা বিনিয়োগে ফিরছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
ডিএসইর সূত্র মতে, ফেব্রুয়ারি মাসে মোট লেনদেন হয়েছিলো বিদেশিরা ১৯২ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। তার পরিবর্তে শেয়ার কিনেছেন ৪৪১ কোটি ৬ লাখ টাকার।
এর আগের মাস জানুয়ারিতে বিদেশি ও প্রবাসিরা ৪৯৫কোটি ১৯ লাখ ৭৭ হাজার ৯১৫ টাকার শেয়ার কিনেছেন। তার বিপরীতে বিক্রি করেছেন ৩১৯ কোটি ৯০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮০ টাকার শেয়ার।
তবে তার আগের মাসে কিনেছিলো ২৪৬ কোটি ৯ লাখ ৩১ হাজার ৮১৬ টাকার শেয়ার। তার বিপরীতে শেয়ার বিক্রি করেছিলো ৩৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার ৯৪৬ টাকার শেয়ার। অর্থাৎ বিদেশিরা ডিসেম্বর মাসের তুলনায় জানুয়ারিতে ২৪৯ কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯ টাকার বেশি শেয়ার কিনেছে। আর ফেব্রুয়ারি মাসে ২৪৯ কোটি ৪ লাখ টাকার বেশি শেয়ার কিনেছেন বিদেশিরা।
ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, নির্বাচনের আগে এক ধরনের রাজনৈতিক শঙ্কা ছাড়াই, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে। নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে এ কারণে বিদেশিরাও শেয়ার কেনা বাড়িয়েছেন। বিদেশিদের বিনিয়োগ সামনে আরও বাড়বে। কারণ, অনেক ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম এখনো বেশ কম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, নির্বাচনের আগে বিদেশিরা খুব একটা বিনিয়োগ করছিল না। উল্টো বিনিয়োগ তুলে নিয়েছিলো, এটাই স্বাভাবিক।
তিনি আরও বলেন, অনিশ্চয়তা থাকলেও মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়বে।