মেগা প্রকল্পে বড় ঋণ নিতে বাড়তি অনুমোদন লাগবে না

ব্যাংক বীমা, অর্থনীতি

আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 03:59:49

নিয়ম অনুযায়ী সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য বড় অঙ্কের ঋণ নিতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখন থেকে বড় অঙ্কের ঋণ পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাড়তি অনুমোদন লাগবে না। ব্যাংক ও গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এই ঋণ নেওয়া যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে নতুন নীতিমালা করার উদ্যোগ নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী কৃষি ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। বেসরকারি খাতেও ঋণের প্রবাহ কমে গেছে। এ অবস্থায় বড় প্রকল্পে বেশি ঋণের যোগান দিলে বেসরকারি খাতে ঋণের সংকট দেখা দেবে। তখন বেসরকারি খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে।

সূত্রে আরও জানা যায়, ব্যাংকিং খাতে নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলো নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবৃদ্ধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক একেএম আমজাদ হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে একই বিভাগের কর্মকর্তারা আছেন। ওই কমিটি অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে অগ্রাধিকার পাওয়া বড় প্রকল্পগুলোর চাহিদা অনুযায়ী সহজে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করবে। এর আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে বড় অঙ্কের ঋণের প্রয়োজন। এছাড়া বিদেশ থেকে এসব প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি করতে বড় অঙ্কের ঋণপত্রও খুলতে হচ্ছে। কিন্তু বড় অঙ্কের ঋণের ক্ষেত্রে আইনগত বাধার কারণে ওইসব প্রকল্পে চাহিদা অনুযায়ী ঋণের যোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, রামপাল থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর এবং সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প।

ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ এর ২৬ অনুচ্ছেদের (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো একক শিল্প গ্রুপ বা প্রতিষ্ঠানকে কোনো ব্যাংক তাদের মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ দিতে পারে না। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ নগদ আকারে এবং বাকি ১০ শতাংশ পরোক্ষ ঋণ হিসেবে (ঋণপত্র, ব্যাংক গ্যারান্টি এসব খাতে)। এর বেশি ঋণ দিতে পারে না।

এ হিসেবে উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো ব্যাংকের মূলধন ৪০০ কোটি টাকা থাকলে তারা একক কোনো কোম্পানিকে ১০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ দিতে পারে না। এছাড়া খেলাপি ঋণের হার বেশি থাকলে এর চেয়ে আরও কম ঋণ নিতে পারবে। মূলধন কম থাকলে ঋণের বিতরণের ক্ষমতা আরও কমে যায়।

এছাড়া গত বছর ব্যাংকগুলো আগ্রাসী ভিত্তিতে ঋণ বিতরণ করায় এখন পর্যন্ত ১৭টি ব্যাংক আমানত ও ঋণসীমা নির্ধারিত হারের মধ্যে নামাতে পারেনি। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো এখন বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারছে না। উপরন্তু ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকটতো আছেই। এসব মিলে সরকারের অগ্রাধিকার পাওয়া বড় প্রকল্পগুলো ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পাচ্ছে না। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর