গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে ১০৭ কোটি টাকার মামলায় দীর্ঘসূত্রিতা

বিবিধ, অর্থনীতি

ঊর্মি মাহাবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 12:56:29

শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের অধিকার থেকে। প্রতিষ্ঠানের নীট মুনাফার অংশ হিসেবে শ্রম আইন অনুযায়ী যে অর্থ পাওয়ার কথা ছিল, তা আজও পাননি কর্মীরা। শ্রম আদালতের শরণাপন্ন হলেও সুরাহা হয়নি। প্রতিনিয়ত চাকরি হারানোর ভয়ে দিন কাটছে কর্মীদের।

গ্রামীণ টেলিকম সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী যেকোনো প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পত্তি এক কোটি টাকা বা তার বেশি হলে নীট মুনাফার পাঁচ শতাংশ পাবেন কর্মীরা। সেই হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির ১১০ জন কর্মীর ১০৭ কোটি ৯৩ লক্ষ ২৬ হাজার ২০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তারা তা পাননি।

২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক কর্মকর্তা  আমীর হোসেন মুনাফার অংশের জন্য প্রথম মামলা করেন। এ সময় আরও ১৩ জন সাবেক কর্মকর্তা প্রাপ্য আদায়ে মামলা করেন। এ সময় প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মীরাও সচেতন হন তাদের আইনানুগ দাবির বিষয়ে।

২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির কর্মী ফিরোজ মাহমুদ হাসান বাদী হয়ে আরও একটি মামলা করেন মুনাফার অংশের জন্য। ২০১৭ সালের শেষে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে কর্মীদের এ সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯০টি।

প্রথম দায়ের করা ১৪টি মামলার বিপরীতে উচ্চ আদালত থেকে দুই দফায় স্থগিতাদেশ নেয় গ্রামীণ টেলিকমের মালিকপক্ষ। এই স্থগিতাদেশ শেষ হবে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে। বাকি মামলাগুলো চলে শ্রম আদালতে। কিন্তু বারবারই গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষ থেকে ১৪ মামলার স্থগিতাদেশের অজুহাত দেখিয়ে ধীরগতি আনে বাকি ৭৬টি মামলায়। ফলে ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি হওয়ার কথা থাকলেও দেড় বছরেও অগ্রগতি হয়নি কোনো মামলার। এমনকি এখন পর্যন্ত একটি শুনানিও হয়নি বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা।

প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মকর্তা আমীর হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘কর্মীদের টাকা হজম করে ফেলেছেন মালিকপক্ষ। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। শ্রম আদালতে ছয় মাসের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি হওয়ার কথা রয়েছে। ৭৬টি মামলায় শুনানিই হয়নি। মালিকপক্ষ তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করে মামলায় ধীরগতি নিয়ে এসেছে।‘

এসব বিষয়ে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

তবে এসব বিষয়ের সত্যতার কথা জানান গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বিচারের দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে নাজেহাল অবস্থা আমাদের। সময়ক্ষেপণ করে বিচার কার্যকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে মালিকপক্ষ।’

অন্যদিকে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শ্রমিকদের থেকে মালিকপক্ষই বেশি বিপাকে পড়বেন বলে মনে করছেন শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাড. জাফরুল হাসান শরীফ। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘যেসব কর্মী গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাদের কারোরই হায়ারিং ফারারিং অথরিটি নেই। তাই তারাও শ্রমিক। আর সেই কারণেই তারা শ্রম আইন অনুযায়ী সকল পাওনাদি পাবেন। আর মালিকপক্ষ এই পাওনা দিতে যতো দেরি করবেন, তার সাথে তাদের বাড়তি সুদ দিতে হবে। গ্রামীণ টেলিকমকে ব্যাংক ইন্টারেস্ট রেট এর সাথে বাড়তি দুই শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে কর্মীদের।’

গ্রামীণ টেলিকমের অভ্যন্তরীণ অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে গ্রামীণ টেলিকমের নীট মুনাফা হয়েছে দুই হাজার ১৫৮ কোটি ৬৫ লাখ ২০ হাজার ৪১৭ টাকা। শ্রম আইন অনুযায়ী, এই মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১০৭ কোটি ৯৩ লক্ষ ২৬ হাজার ২০ টাকা পাওয়ার কথা প্রতিষ্ঠানের ১১০ জন কর্মীর। কিন্তু গ্রামীণ টেলিকম মালিকপক্ষ এক টাকাও কর্মীদের না দিয়ে পুরো অর্থই নিয়ে নিয়েছে নিজের পকেটে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর